আজ সুধীন দাশগুপ্তর জন্মদিন।
রবিঠাকুরের উত্তীয় নিঃস্বার্থভাবে, “অকারণে” ভালোবেসেছিল। গেয়েছিল,
“ন্যায় অন্যায় জানিনে জানিনে জানিনে
শুধু তোমারে জানি ওগো সুন্দরী
চাও কি প্রেমের চরম মূল্য দিব আনি!”
সুধীন দাশগপ্তর উদ্দাম প্রেমিক কিন্তু দাবি করেই বসে –

“আমি যে নিজেই মত্ত
জানিনা তোমার শর্ত
যদি বা ঘটে অনর্থ
তবু তোমাকে চাই । ”
কিন্তু আবার তার জন্য ত্যাগ স্বীকার করতেও কোন দ্বিধা নেই –
“যদি কখনো একান্তে
চেয়েছি তোমায় জানতে
শুরু থেকে শেষ প্রান্তে
ছুটে ছুটে গেছি তাই ।
কি অসাধারণ অন্তমিল বিভিন্ন পংক্তিগুলিতে, লক্ষনীয় অন্তমিলে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তিনি প্রচলিত ক্রিয়াপদের মিলকে (উদাহরণ স্বরূপ, – চলবে-বলবে, ফুটবে-উঠবে, এলে-গেলে, দেখেছি-রেখেছি-বুনেছি ইত্যাদি) যথাসম্ভব পরিহার করেছেন। –
“আমি যে দুরন্ত
দুচোখে অনন্ত
ঝড়ের দিগন্ত জুড়েই স্বপ্ন ছড়াই ।”
কিংবা শুরুতেই যা ছিল –
“হয়তো তোমারি জন্য
হয়েছি প্রেমে যে বন্য
জানি তুমি অনন্য
আশার হাত বাড়াই ।”
আর সব শেষে –এক অস্থির উপরোধ আর আন্তরিক অনুনয়-
“তুমি তো বলনি মন্দ
তবু কেন প্রতিবন্ধ
রেখোনা মনের দ্বন্দ্ব
সব ছেড়ে চল যাই ।
এই গানটিকে সামগ্রিকভাবে দেখলে দেখা যাবে, প্রথমে প্রেমিকের বিনয় ও আশা, তারপরে তার উদ্যম – অনুপমা প্রেমিকাকে পাওয়ার জন্য যে অনেক পথ হাঁটতেই রাজী, এরপরে দুর্বিনয় – দুরন্তপনা, আর একেবারে শেষে এসে চূড়ান্ত আত্মসমর্পন। এই সব কিছুতেই দেখতে পাই সেই চিরন্তন, অবুঝ আর নবীন প্রেমিকটিকে, যে আশ্চর্যজনক ভাবে সমকালীন। এতদিন পরেও এই গানের প্রতি বিভিন্ন প্রজন্মের আকর্ষণের মূল কারণ কিন্তু এটাই।
সত্যজিতের যেমন সৌমিত্র, সুধীন দাশগুপ্তের তেমনি বোধহয় মান্না দে। এই জুড়ির যুগলবন্দী তে আমরা পেয়ে গেছি অনেক চিরকালীন গান। সুধীন দাশগুপ্ত যেন গানের কথা লিখে সুর করতেন তা মান্না দে গাইবেন ভেবেই। আমার কাছে তাঁদের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি বোধুহয় এই গানটি যেখানে তাঁরা পরস্পরের উদেশে বলছেন,
জানি তুমি অনন্য

আশার হাত বাড়াই
ছবিগুলি সব ইন্টারনেট থেকে নেওয়া