১৯৯২ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে আবির্ভাব হলেও তা একেবারেই মিলিয়ে গিয়েছিল বুদবুদের মত। কিন্তু ব্যাঙ্গালোরে বসেও নামটা শোনা হয়ে গিয়েছিল সেই ১৯৯০ সালেই। কারণ বাংলার রণজি ট্রফি জয়ের টীমে তরুণ সদস্য রূপে তিনি ছিলেন।
কিন্তু ১৯৯২ সালে যখন গুজব ছড়ানো হয়েছিল যে ‘মহারাজ’ নাকি দ্বাদশ ব্যাক্তির দায়িত্ব পালনে অসম্মত হওয়াতে টীম ক্ষুব্ধ, তখন অন্য প্রবাসী বাঙালীদের মত আমাদেরও খুব আওয়াজ খেতে হয়েছিল।
এমনকি ১৯৯৬ সালে ইংল্যান্ডে সুযোগ পাওয়ার পরও শুনতে হয়েছিল, “কোটার প্লেয়ার”!! কিন্তু লর্ডসের পর সব ওলট পালট হয়ে গেল, আমরাও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। তারপর বিজয়রথ, টীমের নেতৃত্ব, খারাপ ফর্ম, বাদ পড়া এবং মঞ্চে পুনঃপ্রবেশ। মাথা উঁচু করে অবসর। এত কিছুর মধ্যেও আত্মবিশ্বাস হারায় নি ছেলেটা!! দেখে তো ভালো লাগবেই।
কিন্তু এর ওপরেও আরো একটা বস্তু আছে, – ছেলেটির চরিত্রে । এক অদ্ভুত মানসিক দৃঢ়তা, যা আমাকে বরাবর মুগ্ধ করে আর যার থেকে আমরা বাঙালীরা বিশেষ করে অনেক কিছু শিখতে পারি।
সাধারণতঃ আমরা আমাদের সাফল্যের জন্য নিজেকে এবং ব্যর্থতার জন্য সারা পৃথিবীকে দায়ী করে থাকি। সৌরভের ব্যপারটা অন্যরকম। বাদ পড়ার পর চক্রান্তের গল্প চলতেই থাকল। সৌরভ কিন্তু তাতে কান না দিয়ে নিজেকে আরো উন্নত করতে লাগলো।
একবার কাগজে পড়েছিলাম, ছোট্ট সানা নাকি টিভিতে না দেখে পাশে বসে থাকা বাবা কে জিজ্ঞেস করছিল, “বাবা, তুমি খেলছ না’?” বাবা ও নির্ভীক, নিষ্কম্পভাবে উত্তর দিয়েছিলেন, –
‘ না রে, আমি ভালো খেলতে পারিনি, তাই আমাকে বাদ দিয়েছে’!
জনশ্রুতি কিন্তু সৌরভের চরিত্রের সঙ্গে মানানসই।
যখন টিভিতে মতামত দিতেন, তখম ধোনীর বিরুদ্ধে তাঁকে খুব উৎসাহিত করা হত। অনেকটা এই রকম-
‘আচ্ছা, ধোনির লাকটা কি দারুণ না!”
সৌরভের সপ্রতিভ ও চটজলদী উত্তর –
“শুধু লাক দিয়ে এই লেভেল এ কি আর চালানো যায়, অসাধারণ পারফর্ম্যান্স ও আছে।”
দুই চির তুলনামূলক ক্যাপ্টেন এইরকম ভাবে বলছেন আরেকজন সম্পর্কে, সত্যিই শেখার।
আবার কেউ যখন বলছেন, -” জানেন সব আছে, শুধু চক্রান্ত করে আটকে দিল”!! তখনও হেসে উত্তর -” চক্রান্ত করে আটকানো যায়, কিন্তু চক্রান্তকে এড়িয়ে যাওয়ার মত প্রতিভা থাকলে আটকানো শক্ত”। 😦
সত্যি, নিজের ব্যর্থতার দায় অপরের ঘাড়ে চাপাতে তো আমাদের জুড়ি নেই। আমাদের ছোটবেলাতে মাটিতে পড়ে গেলে শেখানো হয় যে, – তোমার দোষ নয়, অভিভাবকরা দুম করে মাটিটাকে মেরে, বকে জানিয়ে দেন দোষ সব মাটিটার –
ব্যস! আমাদের ভবিষ্যৎ ওখানে শেষ। রবিঠাকুর যতই ‘বাহির ছেড়ে ভিতরেতে’ খোঁজার কথা বলুন, ‘পুষ্পবনে পুষ্প নাহি’ বলুন, আমরা আমাদের সাফল্যের কৃতিত্বটুকুই নিতে রাজী, ব্যর্থতা – চক্রান্ত আর পরিবেশ! যদি প্রশ্ন ওঠে, আচ্ছা এই যে গুটিকতক সাফল্য, তার পিছনেও কি কোন পরিবেশ” !! না, না মোটেই না- আমার প্রতিভা আর পরিশ্রম!!
কদিন আগেই দেখলাম, কোথায় ক্রিকেট উদবোধন করতে গিয়েছিলেন, কেউ বোধহয় Infrastructure নিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছিলেন, সহাস্যে বললেন – ক্রিকেট খেলতে তো একটা বল আর ব্যাট লাগে’ – ভদ্রতার খাতিরে বলেননি, -“আরো যেটা লাগে সেটা প্রবল একটা ইচ্ছে”!!
আচ্ছা, সৌরভের দাদাগিরি নিয়ে তো আমাদের গর্বের শেষ নেই!! কিন্তু কবে শিখব নিজের ব্যর্থতার দায় নিজের ঘাড়ে নিতে? সরকার, বিরোধী, আমলা, শিক্ষক, ছাত্র, গৃহবধূ, আন্দোলনকারী, নাট্যকর্মী, শিল্পী, স্রষ্টা, – সব্বাই!
বাদ পড়ে অজুহাত না খুঁজে ছোট্ট সানার কাছে নিষ্কম্প ভাবে বলতে পারব- “আমি ভালো খেলিনি তাই বাদ পড়ে গেছি”!!
আজ সৌরভের জন্মদিনে এই প্রশ্নটাই বড় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উত্তর পেয়ে যদি সৌরভে র মত আবার নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করি, আর পায় কে?
তাঁর জন্মদিনে এই শুভেচ্ছা ই পাথেয় হোক।
শুভ জন্মদিন, ক্যাপ্টেন ।
সব ছবিগুলি ইন্টারনেট থেকে নেওয়া।
ভাল লাগলো। তবে জন্মদিনের লেখা বলেই বোধহয় শুধু স্তুতিই রয়েছে লেখায়। ভারতের তো বটেই সম্ভবত দুনিয়ার সর্বকালের সেরা কুড়িজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের মধ্যে থাকবেন সৌরভ। আর খেলাটা ওয়ান ডে হলে প্রথম তিনের মধ্যে।
LikeLiked by 1 person
তা তো বটেই। এটা অনুপ্রেরণার কথা, বিশেষণাত্মক লেখা নয় একেবারেই।
LikeLike
সৌরভ নামের সার্থকতা বজায় রেখেছেন। খুব ভালো।
LikeLiked by 1 person