উত্তম ও তাঁর ভায়েরা

এ গল্প বাংলা ছবির স্বর্ণ যুগের। তখন উত্তম, সৌমিত্র দুজনেই মধ্যগগনে । তাঁদের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক ও খুব মধুর।

তাঁরা একসঙ্গে প্রথম ছবি  করেন তপন সিংহের “ঝিন্দের বন্দী”!  সৌমিত্র এখানে খলনায়ক। কিন্তু সে এক অপরূপ খলনায়ক। নাম ময়ূরবাহন। যাকে দেখে প্রথম দৃশ্যেই মুগ্ধ হবেন শঙ্কর সিং রূপী উত্তমকুমার।

 

                       ঝিন্দের বন্দী – উত্তম ও সৌমিত্র

এই ছবিতে উত্তম ভ্রাতা তরুণ কুমার ও  অভিনয় করছেন। তিনি ছবির কাহিনী অনুযায়ী ও শঙ্কর সিং এর ভাই – কুচক্রী উদিত সিং।

তিনি সত্যিই ভাল অভিনেতা ছিলেন। এমনকি বড় অভিনেতাদের পাশে ও তাঁর অভিনয় চোখে পড়তো। কিন্তু তরুণ একদম বিন্দাস মানুষ ছিলেন। ফূর্তিবাজিতে, খাওয়া দাওয়া নিয়ে চুটিয়ে জীবন ভোগ করতেন। মাধবীর এক সাক্ষাৎকারে এই কথা জানা যায়।

 

সৌমিত্র ও ছিলেন তাঁর শুভানুধ্যায়ী।  একদিন সৌমিত্র বললেন তাঁকে,
“বুড়ো, তোর সুন্দর চেহারা, অভিনয় ভালো করিস, তুই একটু সিরিয়াস হ না। এত মোটা হয়ে যাচ্ছিস। ব্যায়াম কর, বুঝে শুনে খা”!

তরুণ তো শুনেই উড়িয়ে দিলেন
” দূর, দূর, ওসব আমার দ্বারা হবেনা।” মানে ঐ মাধবীর সাক্ষাৎকারে যেরকম শোনা যায়।

বসন্ত বিলাপ ছবিতে তরুণকুমার ও সৌমিত্র

সৌমিত্র জানতেন, তরুণ দাদাকে খুব ভক্তিশ্রদ্ধা করেন। কোন এক অনুষ্ঠানে ফাঁকা পেয়ে বললেন উত্তমকে, যাতে তিনি তরুণকে একটু বলেন। উত্তম বললেন তিনি দেখবেন ।

কদিন পর। তখনো আকাশে আলো ফোটেনি। হঠাৎ সৌমিত্র শুনলেন, কেউ নীচ থেকে তাঁর নাম ধরে ডাকছেন । গলাটা উত্তমকুমারের মত।

লাফিয়ে নেমে দেখলেন, উত্তম খুব বিব্রত । বললেন
“দেখ, বুড়োকে কত বল্লাম । কিছুতেই শোনেনা। আজ ঘাড় ধরে গাড়ি তে তুলে এনেছি । তাও পারছি না। তুই হেল্প কর।”

সৌমিত্র দেখলেন গাড়ির পেছনের সীটে আরাম করে চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছেন তরুণ।

সৌমিত্র গিয়েই এক ধাক্কা, তারপর আরো এক।

তরুণ চোখ খুলে দেখেই কাঁদতে শুরু করলেন,

“পুলু, তুই আমাকে বাঁচা। দাদা মাঝরাতে আমাকে বিছানা থেকেই তুলে এনেছে, বলে চ, হাঁটবি। প্লিজ, তুই বোঝা”!!

বলে আবার চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লেন। উত্তম তাকালেন সৌমিত্র র দিকে, হতাশ,

” না রে পুলু, একে সিধে করা আমাদের কম্মো নয়”!

বাংলার মহানায়ক মাথা নীচু করে পরাজিত মানুষের মত গাড়িতে উঠলেন। সাক্ষী আর এক বিখ্যাত নায়ক।

তখনও সূর্য ওঠেনি।  মহানায়ক ও পারেননি এমন কিছু কাজ ও রয়ে গেছে।

তবে দুইভাই এর কথা বললে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে সেই বিখ্যাত গানের দৃশ্য।  উত্তমের তো গানে লিপ লা জবাব, কিন্তু পাশাপাশি তরুণকেও দেখলে মনে হয় না একচুল কম – সেই বিখ্যাত “দেয়ানেয়া”!!

 

 

3 thoughts on “উত্তম ও তাঁর ভায়েরা

  1. Tarun Kumar has acted in some films as hero also. As far as I remember in film O, ke he had double role. Uttam Kumar once told,” Buro doesn’t know how great an actor he is.” From villain to hero he has acted in all types of role.He was a fine chatacter actor also.

    Like

    1. হ্যাঁ। ঐ উত্তমের কথাটাই ঠিক। আরো একটু পরিশ্রমী হলে উনি অন্যস্তরের অভিনেতা হতে পারতেন।

      Like

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s