শতবর্ষে নির্জন, আত্মমগ্ন, অখিলবন্ধু

তাঁর সম্পর্কে আমার জ্ঞান খুবই কম। তবু কলরবদা বললেন বলেই কিছু লিখলাম।

১৯৭৭ সাল বাঙালীদের জীবনে এক পরিবর্তনের বছর। আমার জীবনেও এক পরিবর্তন এল, আমি আমাদের স্থানীয় হরিনাভি স্কুল ছেড়ে খোদ কলকাতার বিখ্যাত স্কুল ‘পাঠভবন’ এ পড়তে এলাম।

এখানে এসে আমার বেশ লাভ হল। বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে অনেকেই পড়াশোনা ছাড়া, গান বা সাহিত্য বা সিনেমা নিয়ে খুব উৎসাহী ছিল, তাদের সংস্পর্শে এসে আমারও নতুন বিষয়ে আগ্রহ তৈরি হতে লাগলো। এদের মধ্যে আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব হয়েছিল একজনের সঙ্গে। পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশনের সেই ছাত্রটির নাম – সুমিত রায়। তার কাছেই প্রথম শুনেছিলাম অখিলবন্ধু ঘোষের কথা।

তার আগে অবধি আমাদের পরিচিত গায়কদের মধ্যে প্রথমেই ছিলেন হেমন্ত, মান্না, কিশোর, শ্যামল, ধনঞ্জয়, সতীনাথ, মানবেন্দ্র, তরুণ, দ্বিজেন, – পরেও মৃণাল, পিন্টু, সুদাম  ইত্যাদিরা। অন্য রকমের গান নিয়ে ছিলেন বাবা – ছেলে – শচীন – রাহুল। মিন্টু দাশগুপ্তের প্যারডি গানের জন্যও আমরা প্রতীক্ষায় থাকতাম। HMVর ছবিওলা ‘শারদ-অর্ঘ্য’ বইতে ছবি দেখতাম তাঁদের সকলের। কিন্তু কেন জানিনা অখিলবন্ধু ঘোষের কোন স্মৃতিই ছিল না।   জানিনা তিনি HMV তে গান আদৌ গাইতেন কিনা। তাই ১৯৭৭ সালে ঐ সুমিতের কাছে শোনা গান আমাকে সত্যিই বিস্মিত করেছিল।

যে দুটি গান তার কাছে শোনা যেত তা হল – ‘ও দয়াল বিচার কর’ আর ‘তোমার ভুবনে ফুলের মালা আমি কাঁদি সাহারায়’।

 তবে তারপরেও আর সেভাবে শোনা হয়নি। এমনকি পাড়ার পুজোতে বা গানের লোকজনের কাছেও সম্ভবতঃ অখিলবন্ধু সেভাবে পরিচিত হতে পারেননি। সুমিতের গলা খুব ভালো ছিল না, কিন্তু সে অসম্ভব আন্তরিকতা দিয়ে গানদুটি প্রায়শই গাইত। আর সেই গান শুনে আমাদের একটু হলেও অখিলবন্ধু পরিচিতি হয়েছিল।

এরপরে ১৯৮৩ সালে কলকাতা ছাড়ার পর আদৌ তাঁর গান শোনা হয়নি। ব্যাঙ্গালোরে তাঁর গানের ভক্ত কেউ ছিলেন কিনা জানিনা। এমনকি ১৯৮৮ সালে তাঁর মৃত্যুর আগে নেওয়া জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের অধুনা বিখ্যাত সাক্ষাৎকারটিও আমার দেখার সুযোগ হয়নি। সেই আশি বা নব্বইয়ের দশকেও সংযোগ ব্যবস্থা  এত ভাল ছিল না।

ব্যাঙ্গালোরে আমাদের ক্লাবে যে ক’টি পত্রিকা নিয়মিত নেওয়া হত, ‘আনন্দলোক’ তাদের মধ্যে অন্যতম।  নব্বই দশকের মাঝামাঝি গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে ধারাবাহিকভাবে লিখতে শুরু করেন তাঁর আত্মজীবনী – ‘কথায় কথায় রাত হয়ে যায়’। সেখানে আবার দেখা পেলাম অখিল বন্ধু ঘোষের।

অখিলবন্ধু ঘোষের সঙ্গে প্রথম আলাপের কথা বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন পুলকবাবু। নির্মলকুমারের সঙ্গে আলো ঝলমল ভবানীপুরের বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে দেখলেন বাড়ি অন্ধকার। নির্মলকুমার অস্ফুটে বলেছিলেন, ‘আজও ইলেকট্রিক বিল দেবার সময় হল না অখিলদার!’

এই লেখাটি আমার বেশ প্রতীকী মনে হয়। আলো ঝলমল ভবানীপুর আর তার মাঝখানে অন্ধকার অখিলবন্ধুর বাড়ি! এটাই যেন সেই কারণ যে আমরা সাধারণ গানের শ্রোতারা তাঁকে ঠিক সেভাবে পাইনি –যেভাবে পুজোর গানে পেয়েছি অন্য গায়কদের যাদের কথা আগে বলেছি।

তবে পুলকবাবুর সঙ্গে বেশ ভালো ‘টিউনিং’ হয়ে যায় অখিলবন্ধুর। একবার পুলকবাবু লিখেছিলেন একটি বিশেষ গান – ‘ও দয়াল বিচার করো, দাও না তারে ফাঁসি’! গানটি লিখেই পুলকবাবুর বেশ ভালো লেগেছিল – মনে হয়েছিল এই গান গাওয়ার উপযুক্ত লোক হলেন শচীন কর্তা মানে এস ডি বর্মণ। কিন্তু তখন শচীনদেব স্ত্রী মীরা দেবীর লেখা ছাড়া অন্য কারুর গান গাইবেন না ঠিক করেছেন। তাই নাকচ হয়ে গেল। পুলক তখনই বিকল্প হিসেবে ভেবে নিয়েছিলেন অখিলবন্ধুর কথা। গানটি ডাকে পাঠালেন অখিলবন্ধু কে। এটাই সম্ভবতঃ পুলকবাবুর কথায়  অখিলবন্ধুর গাওয়া প্রথম রেকর্ডের গান।

শচীনকর্তার জন্য লিখিত গানের বিকল্প গায়ক হিসেবে অখিলবন্ধুর কথাই বা কেন মনে হয়েছিল পুলকবাবুর? কারণ একটাই –  শচীন দেব বর্মণের পর এই গান যদি আর কেউ তাঁর মনোমত গাইতে পারেন তিনি নিঃসন্দেহে তাঁর ভাবশিষ্য অখিলবন্ধু। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি লেখা থেকে জানা যায়ঃ

শচীন দেব বর্মণের গানে পাগল ছিলেন তিনি। বহু গুণীজনের কাছে গান শিখেছিলেন, মনে মনে শচীন দেব বর্মণকেও দিয়েছিলেন গুরুর আসন। গাইতে গেলে কখনও বাদ পড়ত না শচীনকর্তার গান। এক বার রেকর্ডে গাওয়া তাঁর নিজের একটি গান ওই শিল্পীর গলায় শুনে মুগ্ধ হলেন শচীন দেব স্বয়ং। ওই একই গান সেই গায়ককে নতুন করে রেকর্ড করার অনুমতি দিলেন তিনি। গানটি ছিল, ‘বধূ গো এই মধুমাস…’। গাইলেনও তিনি। বাংলা গানের ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। মরমি শিল্পী অখিলবন্ধু ঘোষ তাঁর গানে স্পর্শ করেছিলেন গুরুপ্রতিম শিল্পীকেও”

https://www.anandabazar.com/supplementary/rabibashoriyo/100th-year-birth-anniversary-of-akhil-bandhu-ghosh-1.1217069

গুরু –শিষ্যে আরো একটি অদ্ভুত মিল ছিল। তাঁদের দুজনের স্ত্রীরাই ছিলেন তাঁদের সুযোগ্যা সঙ্গিনী। নিজের সুর ছাড়া স্ত্রী দীপালি ঘোষের সুরেও তাঁর বিখ্যাত গান আছে – ‘‘যেন কিছু মনে কোরো না’- https://www.youtube.com/watch?v=QzYZZ-DxeAg

এরপরে একবিংশ শতাব্দীতে তো সংযোগ প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটে গেল। বিভিন্ন প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেলে পুরনো গান পরিবেশিত হল। Youtube এ শোনা যেতে লাগলো অনেক পুরনো গান। ইন্দ্রনীল সেন অখিলবন্ধু ঘোষের একটি বিখ্যাত গান তো গাইলেনই, এমনকি তাঁর সেই ক্যাসেটের নামও দিলেন গানের কথার নামে – “দূরের বলাকা”! গানটি হল – ওই যে আকাশের গায় দূরের বলাকা ভেসে যায়!”

 https://www.youtube.com/watch?v=kvk1WAn-N-o

এই সময় আরো একটি ঘটনা ঘটে। আমি সলিল চৌধুরীর গানের আলোচনা সংক্রান্ত একটু গ্রুপে যোগ দিলাম। সেখানে গিয়ে সত্যিই আমার অনেক জ্ঞান লাভ হল। গানের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনাতে আমার সত্যকারের চক্ষুন্মীলন হল বলা যায়। বেশীর ভাগ শুনতাম, কখনো বা দুটি একটি প্রশ্ন করতাম।

সেখানে কোন একদিন এই আলোচনা উঠে এল যে সলিল চৌধুরীর কথায় ও সুরে কেন অখিলবন্ধু ঘোষ গান করেননি। খুব যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন। কে গাননি সলিল চৌধুরীর সুরে? হেমন্ত, মান্না, শ্যামল, ধনঞ্জয় থেকে শুরু করে জটিলেশ্বর! এমনকি বিশ্বজিৎ অবধিও! কাজেই অখিলবন্ধুর বাদ পড়াটা একটু আশ্চর্যজনক।

আমাদের এক বন্ধু তথাগত ভট্টাচার্য জানালো অখিলবন্ধু সাধারণতঃ নিজের সুরেই গান করতেন, অন্য কারো সুরে গান গাইতে স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন না। তথাগত আদ্যন্ত পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভক্ত। সম্ভবতঃ ঘটনাটি ঐ ‘কথায় কথায় রাত হয়ে যায়’ বইটিতেই পেয়ে যায়।

এখানে পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় খুব মর্মস্পর্শীভাবে বর্ণনা করেছিলেন যে একবার অন্য সুরকারের সুরে অখিলবন্ধুকে গান করানোর পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি ও তাঁর বন্ধু মেগাফোনের কমল ঘোষ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, অখিলবন্ধু কিছুতেই সেই গান তুলতে পারলেন না। তাঁর ভাষায়, “অন্যের সুরে বাঁধা পড়ে হারিয়ে গেল শিল্পীর দরদী কন্ঠের মুক্ত আবেগের ওঠানামা। স্বভাবতই ফ্লপ করল রেকর্ডটা ।”

 যদিও অন্যের সুরে গেয়েছেন অখিলবন্ধু, তাও পুলকবাবুর মতামতকে রীতিমতো যুক্তিগ্রাহ্য বলে মনে করা যেতে পারে। তাঁর বিখ্যাত, জনপ্রিয় গানগুলি তাঁর নিজের সুরেই। এখানেও সম্ভবতঃ অখিলবন্ধু তাঁর গুরু শচীনদেবের সেই পরম্পরার অনুসারী। অন্যের সুরে কি গান গাইতে স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন শচীনদেব? তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিমাতে বা গায়কীর কথা মনে রেখে সুর করতে পারতেন অন্য সুরকাররা? শচীনদেব যদি মুম্বাই না গিয়ে কলকাতায় থেকে যেতেন তাহলে তিনিও কি অবহেলিতই থাকতেন? তাঁর ভাবশিষ্যের মতই?

তাঁর ঐ বিখ্যাত ইন্টারভিউটি (https://www.youtube.com/watch?v=jE-kbxeCwxI&t=195s)  তে অখিলবন্ধু তাঁর জীবনের শিক্ষাদীক্ষার অনেক কথাই বলেছেন। আর সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছিলেন জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায় যিনিও অখিলবন্ধুর মতই একটু অন্যধারার গায়ক। ফলে বেশ চিত্তাকর্ষক হয়েছে।

শেষ বিচারে মনে হয় পুলকবাবুর ‘টিউনিং’ কথাটি ভারি মনোগ্রাহী। তিনি সম্ভবতঃ বুঝে গিয়েছিলেন অখিলবন্ধুকে পূর্ণমাত্রায়। না হলে তাঁর জন্যই কেন লিখবেন এই কথাগুলি –

উষ্ণ মরুর অভিশাপ লয়ে
ভেঙ্গে গেছি আমি অবসাদে ক্ষয়ে
কণ্ঠ আমার দীর্ঘনিশ্বাসে ভুল সুরে গান গায়
তোমার ভুবনে ফুলের মেলা
আমি কাঁদি সাহারায়”

(https://www.youtube.com/watch?v=ewRNfuyQjSM)

ছবিগুলি সবই ইনটারনেট থেকে গৃহীত

7 thoughts on “শতবর্ষে নির্জন, আত্মমগ্ন, অখিলবন্ধু

  1. HMV লেবেলে অখিলবন্ধু গেয়েছিলেন দু-বছর ১৯৫৩ ও ১৯৫৪ সালে, Columbia লেবেলে একটি মাত্র রেকর্ড, পঙ্কজ মল্লিকের সুরে । তুমি যদি ৭০-দশকের শারদ অর্ঘ্যের কথা বল তবে তাতে অখিলবন্ধু-র থাকার কথা নয় । ” মায়ামৃগ সম”, HMV রিলিজ, সুরকার ছিলেন দুর্গা সেন । উনি মূলত Megaphone – র শিল্পী ছিলেন, প্রথম রেকর্ডও ওই কোম্পানি থেকে, ১৯৪৭ সালে ।
    “ও দয়াল বিচার করো”, পুলকের লেখা -অখিলবন্ধুর গাওয়া প্রথম গান নয় । প্রথম, ১৯৫৯ সালের, “ কবে আছি কবে নেই” । রেকর্ডের উল্টো-পিঠে ছিল সেই বিখ্যাত গান, শান্তি ভট্টাচার্যের রচনা, “ঐ যে আকাশের গায়” (JNG 6046)।
    অনেকে মনে করেন, অখিলবন্ধু নিজের সুরের বাইরে অন্য কারোর সুরে গান করেন নি । এটি ভ্রান্ত ধারনা । দুর্গা সেন, পঙ্কজ মল্লিক, দীপালি ঘোষ ছাড়াও উনি সন্তোষ মুখোপাধ্যায়, দিলীপ সরকার, অনুপম ঘটক, সুধীরলাল চক্রবর্তী, প্রবীর মজুমদার, রতু মুখোপাধ্যায়, গোপাল দাশগুপ্ত ও মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে গেয়েছিলেন ।

    Liked by 1 person

    1. অখিলবন্ধু ঘোষের বহু গানের প্রকৃত সুরকারের পরিচয় নিয়ে যথেষ্ট বিভ্রান্তি বর্তমান। রেকর্ডে একরকম উল্লেখ আছে, অথচ সংশ্লিষ্ট গানটির সৃজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের স্মৃতিচারণা সম্পূর্ণ ভিন্ন সাক্ষ্য দেয়। এইভাবে ওনার কন্ঠে গীত বহু গানের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, রেকর্ডে সুরকার হিসেবে অন্য কারো নাম উল্লেখ থাকলেও প্রকৃত সুরকার উনি নিজেই। উদাহরণ স্বরূপ ওঁর বহুল জনপ্রিয় দুটি গানের উল্লেখ করা যেতে পারে।
      ১। আজি চাঁদিনী রাতি গো- মূল রেকর্ডটি দেখবার সৌভাগ্য হয়নি, তবে Megaphone থেকে প্রকাশিত CD (#MECD-066) তে গানটির সুরকার হিসেবে উল্লেখ আছে সন্তোষ মুখোপাধ্যায়ের। গানটির গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়এর স্মৃতিচারণা কিন্তু ভিন্ন সাক্ষ্য দেয়।পুলকবাবুর তথ্য অনুযায়ী, সেটা ছিল অখিলবন্ধুর সঙ্গে পুলকের প্ৰথম সাক্ষাৎ।বন্ধুবর নির্মলকুমারের সঙ্গে পুলক গেছেন ভবানীপুরে অখিলবন্ধুর বাড়ি। গিয়ে দেখেন, মোমবাতির আলোয়( লোডশেডিং নয়, ইলেকট্রিক বিল না দেওয়ায় বাড়ি বিদ্যুৎ-বিহীন) গলদঘর্ম অবস্থায় এক ঘর লোক এবং সিগারেটের ধোঁয়ার উপস্থিতিতে এক ভদ্রলোক হারমোনিয়াম নিয়ে কেদার রাগে আলাপ করছেন! নির্মলকুমার গীতিকার হিসেবে পুলকের পরিচয় দেবার পর অখিলবন্ধুর প্রতিক্রিয়া (পুলকের ভাষায়): “লিখুন তো একটা গান। কেদার দিয়ে শুরু করব, তারপর আনব বসন্ত বা বাহার… লিখুন, লিখুন, চুপ করে আছেন কেন?কাল বালিগঞ্জে মুম্বাই থেকে অশোককুমার ফাংশন করতে আসবেন…সেখানে এ গানটা গাইব”। একঘর ভর্তি লোক, ধোঁয়ায় ভর্তি ঘর, টিমটিমে আলো। লিখে ফেললাম, আজি চাঁদিনী রাতি গো।”
      অর্থাৎ, এই “অশ্ব-আননের” সাক্ষ্য অনুযায়ী, এই গানটির সুরকার অখিলবাবু স্বয়ং- অন্য কেউ নন!
      ২। “ও দয়াল বিচার করো”- রেকর্ডের তথ্য বলছে গানটির সুরকার রতু মুখোপাধ্যায়। কিন্তু ভাস্করদা তাঁর লেখাতেই বিস্তৃত উল্লেখ করেছেন পুলকের স্মৃতিচারণা, কিভাবে শচীন কর্তার নাম করে লেখা গান পুলক অখিল বাবুকে ডাকযোগে পাঠিয়েছিলেন এবং পরে সেই গানই ইতিহাস সৃষ্টি করে। পুলক কোথাও রতুর নাম উল্লেখ করেন নি গানটির ব্যাপারে। মনে রাখতে হবে, যে রতু পুলকের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং রতুর সুরে এবং তাঁর কথায় অন্যান্য বহু শিল্পীর কণ্ঠে বহু জনপ্রিয় গানের কথা পুলক তাঁর স্মৃতিকথার নানা স্থানে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং, ধরে নিতে হবে এই গানটির ক্ষেত্রেও সুরকারের নামে বিভ্রান্তি আছে।

      Like

  2. অধিকাংশ সাফল্য নিজের সুরে কারণ উনি ১৯৫৩ সালের পরে মূলত বাংলা আধুনিক ও রাগপ্রধান গান অন্যের সুরে গাইতে চাননি । এর পেছনে কমলদার হাত ছিল । মেগাফোন রেকর্ড কোম্পানির কর্ণধার, জিতেন্দ্রনাথ ঘোষ ১৯৫৮ সালে প্রয়াত হন । ১৯৫৯ সালের জানুয়ারি মাসে নতুন শিল্পীর সঙ্গে মেগাফোনের কয়েকজন পুরনো শিল্পীকেও সাদরে ফিরিয়ে এনেছিলেন কমল ঘোষ । অখিলবন্ধু বলেই দিয়েছিলেন নিজের সুরে রেকর্ড করবেন এবং এই ছিল মৌখিক চুক্তি । আবেগপ্রবণ শিল্পী, অখিলবন্ধু বাণিজ্যিক লাভ-লোকসানের কথা ভেবে চলতেন না, সে জন্যই তাঁর কাছে মানবিক আবেদনের মূল্যই ছিল সর্বাধিক । তিনি ভোলেননি বিখ্যাত রেকর্ডশিল্পী হওয়ার আগেই মেগাফোনই তাঁকে প্রথম রেকর্ড করার সুযোগ দেয় ।

    Liked by 1 person

  3. অখিলবন্ধু অন্যের সুরে গাইতে গিয়ে ব্যর্থ হতেন, এমন ধারণা ছড়িয়ে দেওয়া লেখাটি আমিও পড়েছি। একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে সাধারণীকৃত করা, বেশ দুর্ভাগ্যজনক।

    অখিলবন্ধু শচীন দেববর্মণের ভক্ত ছিলেন, তাঁর গান গাইতেন অনেক, রিমেকও করেছেন। শুরুর দিকে অনুপম ঘটক, সুধীরলাল চক্রবর্তী প্রমুখের সুরে গান গেয়েছেন, যথেষ্ট স্মরণীয় সব গান। রতু মুখোপাধ্যায়ের সুরেও চমৎকার হিট আছে। স্ত্রী দীপালির সুরেও। এর বাইরেও কাজ করেছেন একাধিক সুরকারের সঙ্গে। হ্যাঁ, নিজের সুরে সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছন্দ ছিলেন, এ কথা পরিসংখ্যানই বলে— কিন্তু তার বিপরীতে কোনো নেতিবাচক ধারণা ছড়ানোর মানে নেই।

    অখিলবন্ধুর এই লাইভ অনুষ্ঠানটি দূরদর্শনে বহুবার দেখেছি। আশ্চর্য হয়েছি, মধ্য ষাট পেরিয়েও কী সক্ষম সুরেলা কণ্ঠসম্পদ! আমার স্মৃতিতে, বড় গাইয়েদের এই ধরনের যতগুলো দূরদর্শন-অনুষ্ঠান আছে, অত বেশি বয়সে অত তাজা ও মধুর কণ্ঠে আর কেউ গাইতে পারেননি ওখানে।

    Liked by 1 person

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s