——১—-
গোড়ার কথা
যে কোন শিল্পীর শিল্পসৃষ্টির কাজে সহায়ক হয় তাঁর দুটি ভূমিকা যাকে বলা যেতে পারে যথাক্রমে ‘ঘর ও বাহির’। এখানে রাবীন্দ্রিক ভাবনার সূত্র ধরেই আমরা বলতে চাইছি, ঘর হল অন্তঃপ্রকৃতি, বাহির বিশ্বপ্রকৃতি। সব শিল্পীই, তিনি সাহিত্যিক, নাট্যকার, চলচ্চিত্রকার বা সঙ্গীতশিল্পী যাই হোন না কেন এই দুই প্রকৃতির মিলন ঘটিয়ে থাকেন তাঁর শিল্পকর্মে। তবে প্রত্যেক শিল্পী বিশ্বপ্রকৃতিকে নিজের চেতনার রঙে রাঙিয়ে নেন আর তার ফলে তাঁর সৃষ্টি ভিন্ন মাত্রা পায়।
এখানে বিশ্বপ্রকৃতি বলতে আমরা ধরে নিচ্ছি শিল্পীর সম্পূর্ণ বহির্জগৎকেই। যেমন সাহিত্যিক যখন সাহিত্যকর্মে নিযুক্ত হন, তখন তিনি প্রকৃতি, সমাজ সংসার, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ঐতিহাসিক ঘটনা, বিভিন্ন ভৌগোলিক ও বৈজ্ঞানিক ঘটনা ইত্যাদির মধ্য থেকে উপাদান সংগ্রহ করেন আর তার সাথে ‘আপন মনের মাধুরী মিশায়ে’ রচনা করে ফেলেন কাব্য, উপন্যাস, ছোটগল্প, ভ্রমণ-কাহিনী ইত্যাদি। উদাহরণ হিসেবে নেওয়া যেতে পারে বাংলা সাহিত্যে ঐতিহাসিক উপন্যাসের ধারাটিকে। স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্র থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ, রমেশচন্দ্র দত্ত, হয়ে সর্বাধিক পুষ্টিলাভ করে যাঁর হাতে তিনি নিঃসন্দেহে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ ঐতিহাসিক উপন্যাসের ‘অবলম্বন’ রূপে থাকে মূল ঐতিহাসিক ঘটনাটি।
এই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে শিল্পী যখন নির্মাণ কার্যটি শুরু করবেন তখন তাঁর স্বাধীনতা কতটুকু? ইতিহাসে যে ঘটনার যা গুরুত্ব, ঔপন্যাসিকের কাছেও কি তা একই থাকবে? আদপেই না, কারণ আমরা জানি ইতিহাসের অনুধাবন শিল্পীমাত্রের কাছেই পাল্টে যেতে পারে। খোদ রবীন্দ্রনাথ “বউঠাকুরাণীর হাট” উপন্যাসে প্রতাপাদিত্যকে যেভাবে এঁকেছেন, পরে সেই ভাবনা থেকে অনেকখানিই সরে এসেছেন। আবার মহাভারতের চরিত্রগুলিকেও রবীন্দ্রনাথ দেখিয়েছেন নতুন আলোকে। এখানে আমরা একঝলক দেখে নিতে পারি খোদ রবীন্দ্রনাথ এই দ্বিধার সম্পর্কে কি বলেন-
“প্রতিবাদী বলিবেন, সেইজন্যই বলি, উপন্যাস যত ইচ্ছা লেখো, কিন্তু ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখিয়ো না। এমন কথা আজিও এ দেশে কেহ তোলেন নাই বটে, কিন্তু ইংরাজি সাহিত্যে এ আভাস সম্প্রতি পাওয়া গেছে। সার ফ্রান্সিস প্যাল্গ্রেভ বলেন, ঐতিহাসিক উপন্যাস যেমন এক দিকে ইতিহাসের শত্রু তেমনি অন্য দিকে গল্পেরও মস্ত রিপু। অর্থাৎ উপন্যাসলেখক গল্পের খাতিরে ইতিহাসকে আঘাত করেন, আবার সেই আহত ইতিহাস তাঁহার গল্পকেই নষ্ট করিয়া দেয়; ইহাতে গল্প-বেচারার শ্বশুরকুল পিতৃকুল দুই কুলই মাটি। ।“ ১
একজন চলচ্চিত্রকার যখন কোন পূর্ব প্রকাশিত কাহিনীর ভিত্তিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন, তখনও এই প্রশ্ন উঠবেই। অর্থাৎ, কোন সাহিত্য যখন চলচ্চিত্রায়িত হতে যাচ্ছে তখনো কি বলা যাবে যে, সাহিত্যাশ্রিত চলচ্চিত্র, একদিকে যেমন চলচ্চিত্রের শত্রু, অপরদিকে তেমনভাবে সাহিত্যেরও? ‘চলচ্চিত্র-বেচারার শ্বশুরকুল পিতৃকুল দুই কুলই মাটি!!’ এই প্রশ্ন ও তো ওঠার সম্ভাবনা প্রবল। ইতিহাস ও সাহিত্য এক নয়, একটি ঘটনা, বাস্তব। অপরটি শিল্প। কিন্তু ইতিহাসের নতুন তথ্য আসাতে যেমন বাস্তব পাল্টায়, ঠিক সেভাবেই পাল্টে যেতে পারে কি সাহিত্য নামক শিল্পের ‘অনুধাবন’?
এই প্রবন্ধতে আমরা প্রয়াসী সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে। আমরা প্রবন্ধটির সীমিত পরিসরে চেষ্টা করব বাংলা সাহিত্যের চলচ্চিত্রায়নের ক্ষেত্রে এই জরুরী প্রশ্নটি নিয়ে আলোচনা করার। তবে আমাদের ভূমিকা ঠিক গবেষক বা বিশেষজ্ঞ চিত্রসমালোচকদের নয়, বরং তা হবে অনুরাগী পাঠক ও দর্শকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই। আমরা মূলতঃ আমাদের আলোচনার কেন্দ্রমুখ রাখব সাহিত্যের মূল ভাবনার চিত্রায়নে এবং তার আনুষঙ্গিক চরিত্রায়নে। সিনেমার অন্য আঙ্গিকগত ব্যাপারের আলোচনা আমরা ঋদ্ধ সমালোচকদের জন্যই রেখে দিতে চাই।
অশোক রুদ্রর চিঠির প্রত্যুত্তরে লেখা তাঁর চিঠিটি তে সত্যজিৎ খুব সুন্দর ভাবে সাহিত্য আর সেই সাহিত্য অবলম্বনে রচিত ছবির সম্পর্ককে খোঁজার চেষ্টা করেছেন। সেই চিঠির বিষয়বস্তু কোন সাহিত্যানুরাগী চিত্রপরিচালকের কাছে বেশ কিছু নতুন তাৎপর্য নিয়ে আসতে পারে। যেমন গল্পের পরিণতিতে বিচ্ছেদ কে কিভাবে দেখানো যেতে পারে দুই মাধ্যমে – তা বিশ্লেষণ করেছেন এভাবে –
“এ দৃশ্যে তাই হাত মিলতে পারে না। ভবিষ্যতে মিলবে কি? জানিনা। জানার প্রয়োজন নেই। রবীন্দ্রনাথ ও জানার প্রয়োজন বোধ করেননি। আজকের মত ঘর ভেঙে গেছে, বিশ্বাস ভেঙে গেছে, ছেলেমানুষি কল্পনার জগৎ থেকে রূঢ় বাস্তবের জগতে নেমে এসেছে দুজনেই। এটাই বড় কথা। এটাই নষ্টনীড়ের থীম।” ২
পরিশেষে তাঁর আত্মসমর্থনে সবথেকে চূড়ান্ত, প্রণিধানযোগ্য মন্তব্য –
“আমার মতে চারুলতাতে এ থীম অটুট রয়েছে।” ৩
এই কথাটি আমাদের মর্মমূলে গেঁথে যায়। অর্থাৎ যখন কোন পরিচালক কোন সাহিত্যাশ্রিত চলচ্চিত্র করতে উদ্যত, তাঁকে অবশ্যই এই ‘থীম অটুট’ রাখার ভাবনাটি মাথায় রাখতে হবে। আমাদের এই প্রবন্ধের মূল সুরও থাকবে এই ‘থীম অটুট’ রাখার ভাবনাকে মাথায় রেখেই।
——২—-
বাংলা ছবির পথচলা
একেবারে শুরুর লগ্ন থেকেই বাংলা চলচ্চিত্র ও সাহিত্য প্রায় হাত ধরাধরি করে চলেছে। ১৯১৯ সালের ১লা নভেম্বর কর্নওয়ালিস থিয়েটারে প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র মুক্তি পেল, ম্যাডান কোম্পানির বিল্বমঙ্গল, পরিচালনায় রুস্তমজী ধোতিওয়ালা (Rustomji Dhotiwala)। ৪

ততদিনে অবশ্য বাংলা সাহিত্যের বেশ কিছু স্বীকৃতি লাভ ঘটে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনা হল রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাইজ প্রাপ্তি। বঙ্কিমের হাত ধরে বাংলা উপন্যাসের পথচলা শুরু হয়ে কেটে গেছে প্রায় সত্তর বছর। এসে গেছেন রমেশচন্দ্র, তারকনাথ, চারুচন্দ্র, উপেন্দ্রনাথ প্রভৃতি লেখকেরা উপন্যাস ও ছোট গল্পে রবীন্দ্রনাথ নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছেন। রবীন্দ্র-পরবর্তী সাহিত্যে আবির্ভাব ঘটে গিয়েছে শরৎচন্দ্রের। অর্থাৎ বাংলা চলচ্চিত্রের ‘আবির্ভাব’ কালে বাংলা সাহিত্য রীতিমত সাবালক।
সাহিত্য অবলম্বনে বাংলা চলচ্চিত্র তৈরীতে ১৯২২ সালটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি নয়, দু-দুটি নির্বাক চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সূত্রপাত হল বাংলা সাহিত্যের চলচ্চিত্রায়ন। প্রথমটি সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের “বিষবৃক্ষ” অবলম্বনে জ্যোতিষচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ছবি, দ্বিতীয়টি শরৎচন্দ্রের ‘আঁধারে আলো” পরিচালনায় ছিলেন শিশির ভাদুড়ি ও নরেশচন্দ্র মিত্র। প্রথমটি মুক্তি পেলো এপ্রিল মাসে, দ্বিতীয়টি সেপ্টেম্বর মাসে। ৫
দেখা যাচ্ছে, নোবেল প্রাইজ জয়ী রবীন্দ্রনাথকে চলচ্চিত্রায়নে পেছনে ফেলে দিলেন বঙ্কিম ও শরৎ। কিন্তু সূর্যালোকের প্রবেশ আর কতদিন আটকানো যায়? পরের বছর, ১৯২৩ সালে নরেশচন্দ্র মিত্রের পরিচালনাতে ‘মানভঞ্জন” দিয়ে চলচ্চিত্রে রবিযুগের শুরু হয়ে গেল। ৬
এসে গেল ত্রিশের দশক। ১৯৩০ সালে ঘটল আরো একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, বাংলা সাহিত্যের ও চলচ্চিত্রের মেলবন্ধনে যার অপরিসীম তাৎপর্য। এই বছরেই বীরেন্দ্রনাথ সরকারের পরিচালনাতে জন্ম নিল নিউ থিয়েটার্স। “এবার তাঁর উদ্যোগ লক্ষ করা গেল গল্প বাছাইয়ে। ছোট থেকেই তাঁর নেশা ছিল সাহিত্যভিত্তিক গল্প পড়া। সেজন্য দেশ ছাড়াও বিদেশের বহু সাহিত্য ভিত্তিক গল্প তিনি পড়েছিলেন। তাই ছবি তৈরীতে তাঁর কাছে প্রথম প্রাধান্য পেল সাহিত্য।” ৭


তাই, খুব স্বাভাবিক ভাবেই, সবাক যুগে ১৯৩১ সালে নিউ থিয়েটার্স প্রযোজিত প্রথম বাংলা সবাক ছবি, প্রথম সাহিত্য নির্ভর চলচ্চিত্র হল ‘দেনা-পাওনা”, পরিচালক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী। ৮
পরের বছর, ১৯৩২ সালে নিউ থিয়েটার্স এর প্রয়াসে গাছকোমর বেঁধে আসরে নেমে পড়লেন কে? স্বয়ং কবিগুরু। “নটীর পূজা” নৃত্যনাট্যটি নিজের পরিচালনায় শান্তিনিকেতন থেকে ছাত্রছাত্রী এনে চিত্ররূপ দিলেন তিনি। সঙ্গীত পরিচালনাতে তাঁর ‘সকল গানের কাণ্ডারী’ – দিনুবাবু। গুরুদেবের বিশ্রামের জন্য বি এন সরকার আমগাছের ছায়ায় পুকুরপাড়ে একটি খড়ের ছাউনি দেওয়া গোলঘর তৈরী করে দেন। রবীন্দ্রনাথ এই পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, “এটা আমার কাছে দ্বিতীয় শান্তিনিকেতন।” ৯
যদিও খোদ রবিঠাকুরের নির্দেশিত চলচ্চিত্রটি একেবারেই সাফল্য লাভ করেনি, তাহলেও এর পর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। ছোটগল্প আর উপন্যাসের ভিত্তিতে রচিত হতে লাগলো বহু বাংলা চলচ্চিত্র। লেখকদের মধ্যে বঙ্কিম-রবি-শরৎ তো ছিলেনই। ১৯৩৫ সালে প্রমথেশ বড়ুয়ার “দেবদাস” চলচ্চিত্রে এক ঐতিহাসিক সংযোজন। নিউ থিয়েটার্সের এই সিনেমা জনপ্রিয়তার এক নতুন মাপকাঠি তৈরী করে ফেলল। পরবর্তীকালেও যাঁরা দেবদাস করেছেন তাঁদের কাছেও অনুপ্রেরণা হয়ে থেকেছে এই বড়ুয়াসাহেবের দেবদাস। শরৎ-পরবর্তী কালে তিন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে দুজনের কাহিনী অবলম্বনে বেশ কিছু চলচ্চিত্র হল। এসে গেল কল্লোল যুগ।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটল ১৯৫২ সালে। এতদিন বাংলা সিনেমার ভিত্তি ছিল গল্প আর উপন্যাস। এই প্রথম ভ্রমণ-কাহিনীর ভিত্তিতে চিত্রায়িত হল প্রবোধকুমার সান্যালের ‘মহাপ্রস্থানের ‘মহাপ্রস্থানের পথে’ পাঠ করার পর রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন ‘তোমার ভাষা পাঠকের মনকে রাস্তায় বের করে আনে‘। শরৎচন্দ্র এবং সুভাষচন্দ্রও মুগ্ধ হয়েছিলেন। ১০
এবার সেই কাহিনীর ভিত্তিতে নিউ থিয়েটার্সের প্রযোজনাতে চলচ্চিত্র রচনাতে তুমুল উৎসাহ দেখা গেল। চিত্রনাট্য রচনাতে হাত লাগালেন স্বয়ং লেখকও। পঙ্কজকুমারের সঙ্গীত পরিচালনাতে গানগুলিও খুব জনপ্রিয়তা লাভ করল। ঘরকুনো বাঙালীকে পাহাড়ে আকৃষ্ট করতে এই চলচ্চিত্রের ভূমিকা সত্যি স্মরণযোগ্য। তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে এই ছবি। এরপরে ছবিটির হিন্দি ও তেলেগু সংস্করণ ও মুক্তিলাভ করে।
আরো তিন বছর পরেই এসেই গেল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ১৯৫৫ সাল। সেই বছরে বাংলা চলচ্চিত্রের বিশ্বজয়ের ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিত রূপে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে সাহিত্যের অবদান। বিভূতিভূষণের কাহিনী সত্যজিতের হাতে চিত্রায়িত হল ‘পথের পাঁচালী’। তার তিন বছর পরে (১৯৫৮) আর এক কিংবদন্তী ঋত্বিক ঘটকের হাতে চিত্ররূপ পেল “অযান্ত্রিক” যার ভিত্তি সুবোধ ঘোষের ছোটগল্প! বাংলা সিনেমা বিশ্বের দরবারে কড়া নাড়তে লাগল, তাকে পিছন থেকে প্রয়োজনীয় রসদ যোগাতে লাগলো বাংলা সাহিত্য।
বাংলা ছবির – তা বাণিজ্যিক বা শিল্পসম্মত যাই হোক না কেন, তার একেবারে মূল ভিতই হয়ে দাঁড়াল বাংলা সাহিত্য। শরৎচন্দ্রের পর বাংলা চলচ্চিত্রে যে সাহিত্যিকের মুখ্য ভূমিকা তিনি নিঃসন্দেহে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কাহিনী নিয়ে প্রথম ছবি করার উৎসাহ দেখিয়েছিলেন ঋত্বিক। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ “বেদেনী” শুরু হলেও শেষ হতে পারল না। এর পরেই এসে গেল “জলসাঘর”। সত্যজিতের পরিচালনাতে আর ছবি বিশ্বাসের অসাধারণ অভিনয়ে জমিদার বিশ্বম্ভর রায়ের বেদনা মর্মস্পর্শী ভাবে রূপায়িত হল। পরবর্তী কালেও সত্যজিতের হাত ধরে বাংলা সাহিত্যের গৌরব বেড়েছে। সঙ্গে যোগ দিয়েছেন, তপন সিংহ, তরুণ মজুমদার, অগ্রগামী, অগ্রদূত, অজয় কর, অরুন্ধতী দেবী, ইত্যাদিরা। তারাশঙ্করের খুবই সুসম্পর্ক ছিল বাংলার চিত্রজগতের সঙ্গে। কল্লোল যুগের দুই সাহিত্যিক, শৈলজারঞ্জন মুখোপাধ্যায় ও প্রেমেন্দ্র মিত্র, খুব উৎসাহী ছিলেন। তাঁরা নিজেরা পরিচালনা করেছেন অনেক গুলি কাহিনীচিত্র। বেশ কিছু কাহিনীচিত্রর কাহিনী তাঁদের নিজের।
সাহিত্যের দর্পণে বিভিন্ন ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে বাংলার সমাজ। আর সেই সাহিত্যকীর্তিকে চিত্রায়িত করেছেন বাংলার দিকপাল পরিচালকেরা। ট্র্যাজেডি ও কমেডি, সামাজিক গল্পর দুই দিকই প্রকাশিত। অবশ্যই কমেডির সংখ্যাই বেশী। এছাড়া এসেছে অপরাধীদের কথা (লৌহকপাট), বিভিন্ন পেশার মানুষের কথা, — ডাক্তার (ডাক্তার, আরোগ্য নিকেতন, অগ্নীশ্বর, সপ্তপদী, হাটে বাজারে – ইত্যাদি), করণিক (পরশপাথর, মহানগর), শিক্ষক (পণ্ডিতমশায়), গায়ক (বিলম্বিত লয়), বৈষ্ণব (রাইকমল), হোটেল-মালিক (আদর্শ হিন্দু হোটেল) ইত্যাদি। কিশোর এডভেঞ্চার ও প্রেমের বিখ্যাত ছবিগুলি হল, গুপি-বাঘা সিরিজ, সোনার কেল্লা, তপন সিংহের অতিথি, সবুজ দ্বীপের রাজা বা তরুণ মজুমদারের শ্রীমান পৃথ্বীরাজ, বালিকা বধূ, ইত্যাদি ছবিগুলিতে। সব ছবিগুলি অতি উচ্চাঙ্গের না হলেও তাতে খুব সুন্দর রুচিশীলতার প্রভাব থাকত। মানুষের মনের কাছাকাছি হওয়ার জন্য সেগুলি জনপ্রিয়তাও লাভ করত। এই প্রবন্ধের সংক্ষিপ্ত পরিসরে সব চিত্রায়নের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা সম্ভব নয়। তবে উদাহরণ হিসেবে প্রখ্যাত সাহিত্যিকের অন্যধারার একটি গল্পের ভিত্তিতে সৃষ্ট ছবির সফল বাণিজ্যিক চিত্রায়নের কথা আলোচনা করলে এই জনপ্রিয়তার কথাটি ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষটির সাহিত্য প্রকৃতির সান্নিধ্যে ভরপুর। আধ্যাত্মিকতাও এসেছে বিভিন্ন ভাবে। আবার গার্হস্থ জীবনও চমৎকার ফুটে উঠত তাঁর হাতে। তাঁর একটি অতি বিখ্যাত গল্পের নাম হল – ‘হিঙের কচুরী’! গল্পটির কথক একটি বাচ্চা ছেলে যে কুসুম নাম্নী একটি মেয়ের বাড়িতে যেতে শুরু করে শুধু ‘হিঙের কচুরী’র লোভে। মেয়েটির সামাজিক পরিচয়ে ‘পতিতা’। ধীরে ধীরে দুটি অনাত্মীয় মানুষ কি এক অদ্ভুত বন্ধনে বাঁধা পড়ল। গল্পের শেষে বহুদিন পর ছেলেটি যুবক হয়ে ফিরে এসে সেই বিখ্যাত হিঙের কচুরীর দোকানের কাছেই পুনরাবিষ্কার করেছিল তার অতীতকে। প্রখ্যাত সাহিত্যিক ‘বনফুল’ ভ্রাতা অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় যখন এই গল্প অবলম্বনে সিনেমা করার কথা ভাবলেন, তাঁকে ভাবতে হল এক নায়কের উপস্থিতির কথা। নায়িকা কুসুম আছে, তাঁর এক বাবুও আছে। কাহিনীতে নিতান্ত নগণ্য তার ভূমিকা। শুধু সে হিঙের কচুরি নিয়ে আসত। অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় নিজেও সাহিত্যের অনুরাগী। পরম মমতায় এই চরিত্রটিকে তিনি বড় করে নায়কের আসনে বসালেন, নাম হল অনঙ্গবাবু। নিজের সংসারে অবহেলিত অনঙ্গ পুষ্পর (কুসুমের ছবি-নাম) কাছে এসে শান্তি পেত। ভূমিকাতে এলেন মহানায়ক উত্তমকুমার। নচিকেতা ঘোষের সঙ্গীত পরিচালনা আর গৌরীপ্রসন্ন-অরবিন্দর গীত রচনাতে অসাধারণ গান হল ছবিটিতে। এখানে অসামান্য সংযম দেখিয়েছিলেন চিত্রনাট্যকার-পরিচালক। উত্তমকুমারের প্রবল জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও কাহিনীর কেন্দ্রে কিন্তু তিনি ছিলেন না। মূল উপজীব্য ছিল সেই অনাত্মীয় দুই মানুষের আত্মীয়তা, যা মূল গল্পটির ভিত্তি। ভীষণ জনপ্রিয় হল ছবিটি। এতটাই যে হিন্দি রূপান্তরের কথাও ভাবা হল। “অমর প্রেম” নামে যে কাহিনীচিত্র হল তার পরিচালক শক্তি সামন্ত হলেও চিত্রনাট্যকার রূপে বহাল থাকলেন বাংলার সফল পরিচালক অরবিন্দবাবুই। এখানে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করে অত্যুচ্চ জনপ্রিয়তা লাভ করলেন রাজেশ খান্না। জনশ্রুতি তিনি নাকি নায়কের ভূমিকাতে অভিনয় করার আগে অন্তত বার কুড়ি দেখেছিলেন উত্তমের অভিনয়। এখানে মনে রাখতে হবে শক্তিশালী চিত্রনাট্যকারের হাতে পড়ে এমন চরিত্রের সৃষ্টি হল মূল কাহিনীতে যার ভূমিকা ছিল নগণ্য। কিন্তু কাহিনীর মূল সুর পাল্টালো না, দুই অনাত্মীয় মানুষের মিলন, বিচ্ছেদ ও বহুদিন পর পুনর্মিলনের যে ব্যথা-বিধুর গাথাটি ছিল, তা শুধু অটুটই রইলো না, বরং আরো গভীর অভিঘাত সৃষ্টি করল। অনঙ্গবাবু এই মিলনকাব্যের রচয়িতার ভূমিকাতে যেন দর্শকদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেলেন।
এই ছবির জনপ্রিয়তা আজও অম্লান। বাংলা ও হিন্দি, দুই ভাষাতেই চিত্রনাট্যকার রচিত চরিত্রে দুই মহানায়কের অভিনয়ের কথা এখনও লোকের মুখে মুখে ঘোরে। এতেই বোঝা যায় সাহিত্যভিত্তিক ছবির বাণিজ্যিক সাফল্য ও দীর্ঘকালীন জনপ্রিয়তার জন্য দরকার সাহিত্যমনস্ক চিত্রনাট্যকার ও পরিচালকের।
নিজের কাহিনীর ভিত্তিতে যদি কেউ সিনেমা করেন? বাংলা চলচ্চিত্রে প্রখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ ও নিজের প্রকাশিত কাহিনী অবলম্বনে ফেলুদার দুটি কাহিনী চিত্র করেছেন। প্রথম ছবি ‘সোনার কেল্লা’তে দেখি তিনি আগাগোড়া প্রায় পালটে ফেলেছেন কাহিনীর ক্রমকে। যদিও মূল অপরাধ, অপরাধীর খোঁজ বা সত্যান্বেষণ পর্ব, জটায়ুর সঙ্গে আলাপ, রাজস্থান ভ্রমণ, ইত্যাদি মূল ব্যাপারগুলি ঠিকই আছে। আসলে দুই মাধ্যমের তফাতের জন্য তাঁকে এই পরিবর্তনগুলি করতে হয়েছে। ফলে বই হিসেবে ‘সোনার কেল্লা’ আমাদের আর আকর্ষণ না করলেও কাহিনীচিত্রটির প্রতি আকর্ষণ আজও দুর্নিবার। একই কাণ্ড “জয়বাবা ফেলুনাথ’ এও।
——৩—-
সার্থক রূপায়ণ -১
পরশপাথর
বাংলা সাহিত্যে পরশুরামের আবির্ভাব একেবারে চমকে দেওয়ার মতই। তিনি প্রথাগত ভাবে সাহিত্যের ছাত্র নন। তাঁর সাহিত্যপ্রীতি রবীন্দ্রনাথকে মুগ্ধ করলেও বিচলিত করেছিল গুরু আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রকে। প্রিয় ছাত্র যদি বিজ্ঞান ছেড়ে একেবারে সাহিত্যে মনোনিবেশ করে তাহলে তো সর্বনাশ! তাঁর সাধের বেঙ্গল কেমিক্যালের কি হবে? পরশুরাম অবশ্য দু নৌকোতে পা দিয়ে দিব্যি জীবন কাটিয়েছেন। তাঁর সাহিত্য প্রতিভা নিয়ে একটি অসাধারণ মন্তব্য করেছেন বাংলা সাহিত্যের আর এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক সৈয়দ মুজতবা আলি, “আমি পৃথিবীর কোন সাহিত্য আমার পড়া থেকে বাদ দিইনি। রাজশেখরবাবু যে কোন সাহিত্যে পদার্পণ করলে সে সাহিত্য ধন্য হত। একথা বলার অধিকার আমার আছে”। ১১
সিনেমাটি নিয়ে আলোচনাতে যাওয়ার আগে মূল গল্পটি আমাদের একটু নেড়েচেড়ে দেখতে হবে। পরশুরাম তাঁর বিভিন্ন গল্পে মানুষের বিভিন্ন দুর্বলতার পরিণতি দেখিয়ে অসামান্য হাস্যরসের সৃষ্টি করেছেন। প্রথম গল্প “শ্রীশ্রীসিদ্ধেশ্বরী লিমিটেড” থেকে শুরু করে ‘বিরিঞ্চিবাবা’, ‘গগন-চটী’, ‘বদন চৌধুরীর শোকসভা’, ‘বটেশ্বরের অবদান’, ‘মহেশের মহাযাত্রা’, ‘ধুস্তুরী মায়া” – সবগুলিতেই এই ছাপ দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু সেই দুর্বলতা তারা কাটিয়েও উঠেছে, ‘বিরিঞ্চিবাবা’ সঙ্গীসাথী সহ চম্পট দেন, বটেশ্বর তাঁর কাহিনী চিত্রায়িত করার লোভে ফাঁদে পড়লেও স্বীকার করেন যে নিজের অজান্তেই তিনি ভাল কাজ করে ফেলেছেন, ‘ধুস্তুরী মায়া” গল্পেও বৃদ্ধদ্বয় বুঝতে পারেন জগতের প্রচলিত নিয়মনীতি মেনে নেওয়া ভাল।

এই প্রসঙ্গে ‘গগন-চটী’ গল্পটি অনিবার্যভাবে মনে আসে। আকাশে এক নক্ষত্রের অতর্কিত আবির্ভাবে সারা পৃথিবী ত্রস্ত হলেও একজন নির্বিকার – তিনি ভুবনেশ্বরী দেবী। তিনি ভক্তিমতী, গীতগোবিন্দ, গীতা আর গীতাঞ্জলী কণ্ঠস্থ করেছেন। তিনি সকল ভয়কে হেলায় উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “ ‘আমায় নইলে ত্রিভুবনেশ্বর তোমার প্রেম হত যে মিছে – রবিঠাকুরের এই গান শুনিস নি? মানুষকে যদি ঝাড়েবংশে লোপাট করে ফেলেন তবে ভগবানের আর বেঁচে সুখ কি? লীলা খেলা করবেন কাদের নিয়ে? যা যা, নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমো গে।” ১২
আমরা জানি চরিত্রের নামকরণের মধ্যে দিয়ে পরশুরাম তাঁর বক্তব্য রাখতেন। এখানে ভুবনেশ্বরী দেবী ও একেবারে সুস্থ মানবতার প্রতীক। জিতলেন ও শেষমেশ তিনিই। ‘গগন-চটী’ বিলীন হল বটে, কিন্তু অনেকের মাথা হেঁট হল, কারণ বিপদে তাঁদের বুদ্ধিভ্রংশ হয়েছিল। ব্যতিক্রম ভুবনেশ্বরী দেবী। তিনি বরাবরই বিশ্বাসী, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’ তত্ত্বে আর ‘ভালোবাসার শক্তি’ র জোরে।
‘পরশপাথর’ গল্পটিতেও পরশুরাম খুব সূক্ষ্মভাবে তাঁর প্রিয় তত্ত্বের অবতারণা করেছেন। এই প্রসঙ্গে একটি বাক্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায় – “পরেশবাবু মনে করেন তিনি পরশপাথর ছাড়া আর একটি রত্ন পেয়েছেন – এই প্রিয়তোষ ছোকরা।” ১৩
রূপকের ভঙ্গীতে লেখা হলেও গল্পের এই সারসত্য আমাদের চোখ এড়ায় না। গল্পের শেষে আমরা তাই দেখি, পরেশবাবুর জীবন থেকে পরশপাথর অদৃশ্য কিন্তু প্রিয়তোষ একেবারে উজ্জ্বলভাবে উপস্থিত।
পরশপাথরের স্পর্শে এসে অনেককিছুই সোনাতে রূপান্তরিত হল। রূপান্তর চলাকালীন পরেশবাবুও একটু ‘অসামাল’ হয়ে পড়েছিলেন। পরেশ-পত্নী গিরিবালাও কিন্তু বেশ নির্লোভ মানুষ। প্রথমে সব মেয়েদের মত তাঁর গয়নার দিকে আগ্রহ থাকলেও পরে গণ্ডগোল দেখে তিনি বিভ্রান্ত। তখন তাঁর একমাত্র আকাঙ্ক্ষা একটু তীর্থদর্শন। “গিরিবালা কান্নাকাটি আরম্ভ করেছেন, কেবল বলছেন, যদি শান্তিতে থাকতে পারি না তাহলে ধনদৌলত নিয়ে কি হবে। সর্বনেশে পাথরটিকে বিদায় কর, সব সোনা গঙ্গায় ফেলে দিয়ে কাশীবাস করবে চল।” পরেশবাবু গিন্নির কথা শুনলেন, তাঁর একমাত্র কাছের মানুষ প্রিয়তোষ কে সব রহস্য জানিয়ে দিলেন। ব্যর্থ প্রেমিক প্রিয়তোষ সেই উপহার পাওয়া পাথর খেয়ে আত্মহননের পথ নিল। কিন্তু তার কিছুই হল না, বরং সে পাথরটিকে হজম করার সঙ্গে সঙ্গে রূপান্তরিত সব সোনা পূর্বাবস্থায় ফিরে এল। প্রিয়তোষ কিন্তু জীবন ফিরে পেয়ে মহাফূর্তিতে পরেশবাবুর সঙ্গে লোহার কারখানায় কাজ করতে লাগল। এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন পরশুরাম –“সকলেই জানে যে ব্যর্থ প্রেমে স্বাস্থ্য যেমন বিগড়ে যায় তৃপ্ত প্রেমে তেমনি চাঙ্গা হয়, দেহের সমস্ত যন্ত্র চটপট কাজ করে, অর্থাৎ মেটাবলিজম বেড়ে যায়। প্রিয়তোষ পাথর জীর্ণ করে ফেলেছে, এক্স-রে তে তার কণামাত্র দেখা যায় না। পাথরের তিরোধানের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত সোনা পূর্বরূপ পেয়েছে।’ ১৪
অর্থাৎ প্রেমের মাহাত্ম্য চিরন্তন, আর ধনসম্পদের থেকেও অনেক বড়। এত বড় নীতিবাক্য যে এরকম গল্পের মাধ্যমে বলা যায়, তা কি কেউ জানত?
সুতরাং গল্পের এটাই মূল থীম, খোদ সত্যজিতের মতানুযায়ী এই থীমকে অটুট রাখতেই হবে। তাই গল্পের শেষেও তিনি একেবারে এই ধারণাকেই গুরুত্ব দিয়েছেন বেশী। বাকি যা কিছু পরিবর্তন, সবই আঙ্গিকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বা ‘আলংকারিক’। এখন আমরা একটু সুলুক সন্ধান করে দেখব ছবিতে কি হল।
গল্পটির মত ছবিতেও সত্যজিৎ একেবারে সোজাসুজি গল্প বলার ধরণটিকেই অনুসরণ করেছেন। কারণ তাতেই মূল বক্তব্য পরিস্ফুট হবে, আঙ্গিকের জটিলতায় হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না। প্রথমত ভাবতে হবে চরিত্র অনুযায়ী পাত্র নির্বাচন। এখানে একজনই অভিনেতা, অন্যরা সহ-অভিনেতা। তুলসী চক্রবর্তীর অভিনয় প্রতিভার প্রতি তিনি ভীষণভাবে শ্রদ্ধাশীল। ‘পথের পাঁচালী’ করার সময় প্রসন্ন গুরুমশাইয়ের চরিত্রে রূপদানকালীন তাঁর আগের ধারনা আরো দৃঢ় হয়েছে। “হলিউডে জন্মালে তাঁর খ্যাতি হত গগন চুম্বী” – এই প্রশংসাবাক্য তিনি ব্যবহার করেছেন শ্রী চক্রবর্তী সম্পর্কে।
মূল বিষয়টিতে যাওয়ার আগে আমরা একবার এই কাহিনীচিত্রটির সৃষ্টির অন্তরালের গল্পটি জেনে নিতে পারি। ১৯৫৭ সাল। তখন সত্যজিৎ পথের পাঁচালী ও অপরাজিত শেষ করে মোটামুটি সফল পরিচালক। এর পর তিনি ছবি বিশ্বাসকে নিয়ে শুরু করেছেন “জলসাঘর”। ঘটনাচক্রে ছবি বিশ্বাস ভেনিসে চলে গেলেন “কাবুলিওয়ালা” ছবির জন্য পুরস্কার নিতে। ফলে ছবির কাজ বন্ধ হয়ে গেল। এই অন্তর্বর্তী সময়েই তিনি এই ছবিতে হাত দেন। অর্থাৎ ধরা যেতে পারে তিনি রীতিমতো প্রস্তুত ছিলেন। আমার মতে এই প্রস্তুতির মূল কারণ বাংলা সিনেমাতে তখন তুলসী চক্রবর্তীর মত একজন অসামান্য অভিনেতার উপস্থিতি। আর খোদ সত্যজিৎ নিজেও ছিলেন পরশুরামের ঐ পথের এক দৈনন্দিন পথিক, যিনি আধ্যাত্মিক শক্তি বা দৈবশক্তির চেয়েও বেশি বিশ্বাস করেন মানুষের শক্তিতে। জাগতিক ধনসম্পদ তাঁর কাছে তুচ্ছ। পরবর্তী কালে তাঁর সৃষ্ট বহু চরিত্রে এই ছায়া লক্ষ করা যায়। উল্লেখযোগ্য, ‘পটলবাবু ফিল্মস্টার’, “টেরোড্যাকটিলের ডিম’ বা “বঙ্কুবাবুর বন্ধু’ গল্পগুলির নায়ক চরিত্রগুলি।
গল্পে পরশপাথর পাওয়া নিয়ে বিশেষ উল্লেখ না থাকলেও সেই বিষয়টিকে পরিচালক সামনে নিয়ে এসেছেন একটি শিশুর সঙ্গে পরেশবাবুর বন্ধুত্বের মাধ্যমে। এই ছোট্ট ঘটনাটি কিন্তু নিঃসন্তান পরেশবাবুর শিশুসুলভ মনের সঙ্গে দর্শকের পরিচয় ঘটায়। পরশপাথর পেয়েও পরেশবাবু ধীরে ধীরে ধনী হয়ে ওঠেন। গিন্নির গায়ে চড়ে সোনার গয়না। পরেশবাবুর কারখানা আর বাংলোও হয়, কাজে যোগ দেয় প্রিয়তোষ ছোকরা। এর পরেই আসে চরম পরীক্ষা – কিভাবে আবার পরেশবাবু ফিরবেন তাঁর আগের অবস্থায়?
এইখানেই ছিল অগ্নিপরীক্ষা! গল্পে পরশুরাম লিখেছেন ‘হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে’ পরেশবাবু ‘অসামাল’ হয়ে পড়েছিলেন। তিনি নাকি ছাদের লোহার কড়িকে সোনাতে পরিণত করার ফলে ছাদ বসে গেল। বাড়ির ঘটিবাটি সবই সোনাতে রূপান্তরিত। দেশজুড়ে, পৃথিবীজুড়ে হৈ, হৈ কাণ্ড। অনেকেই জানতে চান এর রহস্য।বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র দূতদের পরেশবাবুর ওপর কড়া নজর। পার্টি ডিনারে প্রায় আমন্ত্রণ পান তিনি। কিন্তু ভবী ভোলবার নয়। পরশুরামের গল্পের ভাষাতে- “পরেশবাবু চুপচাপ খেয়ে যান, মাঝে মাঝে ইয়েস নো বললেন, কিন্তু তাঁর পেটের কথা কেউ বার করতে পারে না, এমনকি শ্যাম্পেন খাইয়েও নয়।” ১৫
এবারে কিন্তু যাকে বলে ‘শিল্পীর স্বাধীনতা” নিলেন সত্যজিৎ। যে ককটেল পার্টিতে পরেশবাবু কিঞ্চিৎ অপ্রকৃতিস্থ হয়ে রহস্য উদ্ঘাটন করলেন, তা একেবারে তাঁর নিজস্ব মস্তিস্কপ্রসূত। অনুপ্রেরণা অবশ্যই গল্পে ছিল, ঐ যে ‘অসামাল’ হয়ে পড়ার ঘটনা।
ছবির এই দৃশ্যটি এক অনুপম উদ্ভাবন। এখানে সারা পৃথিবীতে পরেশবাবুর প্রভাব দেখানোর প্রয়াস রয়েছে। গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের বোঝানোর জন্য হাজির করা হয়েছিল বাংলা সিনেমার তাবড় ব্যক্তিত্বদের। পরেশবাবু দেখাতে চাইলেন যে তিনি ও ‘ম্যাজিক’ জানেন। এবং তাতেই পতন। এখানে ব্যাপারটি অনেক বেশী নাটকীয় সংঘাতপূর্ণ এবং তা এই মাধ্যমের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
গল্পে আছে ‘মাঝে মাঝে তিনি বেনামা চিঠি পাচ্ছেন – তুমি জগতের শত্রু, তোমাকে খুন করব। পরেশবাবুরও ঐশ্বর্যে অরুচি ধরে গেছে। গিরিবালা কান্নাকাটি আরম্ভ করেছেন, কেবলই বলছেন, যদি শান্তিতে থাকতে না পারি তবে ধনদৌলত নিয়ে কি হবে। সর্বনেশে পাথরটাকে বিদায় কর, সব সোনা গঙ্গায় ফেলে দিয়ে কাশীবাস করবে চল।” ১৬
এইভাবে ছবিতে সাজাতে গেলে নিঃসন্দেহে তার অভিঘাত তত হত না যতটা এই পার্টি ও তার পরবর্তী ঘটনাগুলিতে হয়েছে। আসলে ছায়াছবি একটি ‘চাক্ষুষ’ (visual) মাধ্যম। এখানে ঘটনা পাঠ্য বইয়ের চেয়ে দ্রুত গতিতে ঘটাতে হবে। পার্টিতে সব সদস্যদের বিস্মিত মুখভঙ্গি, পরের দিনে কাগজের হেডলাইন, ফর্মুলার লোভে ব্যবসায়ীর আগমন, পল্টুর কাছে শেখা কবিতা দিয়ে ফর্মুলা বোঝানো, প্রিয়তোষের পরশপাথর ভক্ষণ, বাড়ীতে পুলিশের হানা, পরেশবাবুর গ্রেপ্তার ও মুক্তি, প্রিয়তোষের পরশপাথর হজম, সোনার আবার লোহাতে প্রত্যাবর্তন এবং সবশেষে সপ্রিয়তোষ, সপরিবার পরেশবাবুর গঙ্গার ঘাটে ফিটনে ভ্রমণ – দ্রুত ঘটে যাওয়া এই ঘটনাগুলি দর্শককে একেবারে ছবির থেকে চোখ সরাতে দেয় না। পরশপাথর অন্তর্হিত হওয়ার পর সবশেষে আমরাও যেন শান্তি পাই, পরেশবাবুর অভিশাপের থেকে মুক্তিতে। আর এ ছবির পুলিশ ইন্সপেক্টর (হরিধন মুখোপাধ্যায় অভিনীত) সব দর্শকের প্রতিনিধি – ভালোবাসার অমোঘ শক্তি উপলব্ধি করে তাঁর মুখ দিয়ে একটি শব্দই নির্গত হয় – “এমেজিং”! আর এই অসাধারণ ছায়াচিত্র দেখে, আমাদেরও মনের কথা – “এমেজিং”!
——৪—-
সার্থক রূপায়ণ -২
ঝিন্দের বন্দী
এই উপন্যাস ও চলচ্চিত্রটি বিস্তৃত আলোচনার দাবী রাখতেই পারে। ‘ঝিন্দের বন্দী’ উপন্যাসটি পুরোপুরি মৌলিক উপন্যাস নয়। শরদিন্দুর নিজের কথাতেই ‘নামকরণের দ্বারাই বংশপরিচয় স্বীকার করা হয়েছে’। এন্টনি হোপ লিখিত ‘প্রিজনার অব জেন্দা’ উপন্যাসটি খুব সাড়া জাগানো উপন্যাস। প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই খুব জনপ্রিয় হয়। বেশ কটি ছবিও হয় এই কাহিনীর ভিত্তিতে।


ভাবানুবাদে শরদিন্দু একেবারে আমাদের ভারতীয় ঘরানাতেই পেশ করেছেন উপন্যাসটিকে। শরদিন্দুর সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল আসল কাহিনীতে রুপার্টের (Rupert Hentzau) আদলে ময়ূরবাহন চরিত্রটির সৃষ্টি। আদতে খলনায়ক হলেও ময়ূরবাহনের কিন্তু অনেক গুণ আছে – লেখকের নায়ক গৌরীর প্রথম সাক্ষাতেই মনে হয়েছিল – ‘কিন্তু যাই বল, চেহারাখানা সত্যিই ময়ূরবাহনের মতন। কি নাক কি মুখ কি চোখ! আর অদ্ভুত ঘোড়সওয়ার’। এছাড়া তার উচ্চকণ্ঠের হাসিটি বারংবার কাহিনীতে ফিরে আসে ক্রূরতার প্রতীক রূপে। সে একাধারে কুচক্রী ও লম্পট আবার সপ্রতিভ, দুঃসাহসী, দুর্দান্ত। এমনকি রাজার ভাই উদিতকেও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কেন না উদিত তার তুলনায় সব দিক থেকেই নিরেস। সুতরাং এই ভূমিকার অভিনেতাকে শুধুই সুদর্শন, সপ্রতিভ হলে চলবে না, তাকে হতে হবে ধুরন্ধর অভিনেতা যে উত্তমকুমারের মত নায়কের পাশেও উজ্জ্বল থাকবে, বজায় রাখবে নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য। যাতে তাঁর মৃত্যুর পরও সেই অভিনয় ছাপ রেখে যায়, যেমন রেখেছিল শরদিন্দুর চরিত্র “বিজয়ী বেপরোয়া বিদ্রোহী ময়ূরবাহন।”
মূল কাহিনীতেও নায়ক কিন্তু মুগ্ধ ছিলেন রুপার্টের প্রতি। লেখকের বড় যত্নের সৃষ্টি খলনায়ক ‘রুপার্ট’। সেই একই ভাবে অসীম মমতায় শরদিন্দু গড়ে তুলেছিলেন তাঁর ময়ূরবাহনকে। কাজেই উপযুক্ত ময়ূরবাহন পাওয়া না গেলে এই কাহিনী চিত্র তৈরী হতেই পারত না।
১৯৬০ সালে যখন ছবিটি তৈরির পরিকল্পনা হল, তখন বাংলা চলচ্চিত্রে উজ্জ্বল উত্তমকুমার। কাজেই নায়কের ভূমিকাতে তিনিই থাকবেন। কিন্তু আর এক নায়ক ও এসে গেছেন খোদ সত্যজিতের হাত ধরে – তিনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। পরিচালক তপন সিংহের সঙ্গে কাজও করেছেন – ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ ছবিতে। মাত্র ছাব্বিশ বছরের তরুণ সৌমিত্র, চারটি মাত্র সিনেমা করেছেন – অবশ্য তার মধ্যে তিনটি সত্যজিতের সঙ্গে, তা হলেও –! এই খানেই কৃতিত্ব দিতে হয় পরিচালককে, এই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তের জন্য। তিনি নিজেই জানিয়েছেন যে সৌমিত্রর ওপর তাঁর অকুণ্ঠ বিশ্বাস ছিল। সৌমিত্র আগে অভিনেতা, পরে নায়ক। পাশ্চাত্য জগতের বিখ্যাত অভিনেতারা শুধু নায়কের ভূমিকাতেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেন না, বরং নির্দ্বিধায় বিভিন্ন চরিত্রের অভিনয়ের পরীক্ষা নিরীক্ষায় নিজেদের ব্যাপৃত রাখেন। সেই একই পথে চলবেন সৌমিত্রও।

বলা বাহুল্য, তাঁর বিশ্বাসে এতটুকু চিড় ধরাননি সৌমিত্র। এই অভিনয় তাঁর জীবনের এক সেরা অভিনয় হিসেবেই স্বীকৃত হয়ে থাকে।
কাহিনীর শেষে একটু পরিবর্তন করেছিলেন পরিচালক। এই পরিবর্তনের উপযোগিতা নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে, আবার এও ঠিক, শরদিন্দু নিজেই কিন্তু মূল কাহিনী থেকে সরে এসেছিলেন একেবারে কাহিনীর শেষাংশে। তপন সিংহ আবার শেষে ফিরে গেছেন মূল কাহিনীতে।

মূল কাহিনীতে ছিল রাজার অভিষেকের আগেই রাজাকে উদ্ধার করে নিজের দাদা-বৌদির কাছে ফিরে যাবেন নায়ক। শরদিন্দুর কাহিনীতে কিন্তু রাজার মৃত্যু হবে, ঝিন্দের সিংহাসন দখল করবেন নায়ক গৌরীশঙ্কর। তাঁর বাগদত্তা নায়িকা কস্তুরী গৌরীশঙ্করকেই তার নিজস্ব পরিচয়েই গ্রহণ করবেন। কিন্তু এগুলোকে আমরা নিতান্তই বাহ্যিক পরিবর্তন বলে মনে করব।
এই কাহিনীচিত্রের মূল আকর্ষণ একই সঙ্গে উত্তম-সৌমিত্র যুগলবন্দী ও দ্বৈরথ। গৌরীশঙ্কর অবশ্য উত্তমের চরিত্রের সঙ্গে বেশ মানানসই, বাংলা চলচ্চিত্রে রোমান্টিক নায়কের ভূমিকাতে তিনি তখন জ্বলজ্বল করছেন। তাহলেও এই চরিত্রে তিনি অনবদ্য। গৌরীশঙ্কর বাঙালী হলেও অলস, ঘরকুনো নয়। সে তলোয়ার খেলাতে পটু, এমনকি ঘোড়ায় চড়াতে। সর্দার ধনঞ্জয়ের আহ্বান সে উপেক্ষা করতে পারেনা, এডভেঞ্চারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে দাদা-বৌদির বারণ সত্ত্বেও। বিপদের ঝুঁকি নিতে সে প্রস্তুত। এমনকি রাজাকে উদ্ধার করার জন্য সে প্রাণের আশঙ্কা কে হেলায় তুচ্ছ করে। এই সমস্ত চারিত্রিক দিক গুলিই উত্তমের অভিনয়ে খুব সুন্দর ফুটেছে। মনে পড়ে যখন প্রথম ময়ূরবাহন কে দেখেন তিনি, “সত্যিই ও ময়ূরবাহন”! কি এক অপরিসীম মুগ্ধতা তাঁর অভিনয়ে। তিনি যেন উদার মনে প্রতিদ্বন্দীকে দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহ্বান জানাচ্ছেন।

আর ময়ূরবাহন রূপী সৌমিত্র!! তিনি যেন একেবারে শরদিন্দুর বইয়ের পাতা থেকে উঠে এলেন! উপন্যাসটি তাঁর আগে পড়া ছিল, মনে আকাঙ্ক্ষা ছিল একটু ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে সাড়া ফেলার। ফেললেন তো বটেই, তাও আবার স্বয়ং মহানায়কের বিপরীতে। তাঁদের দ্বৈরথের দৃশ্যগুলি সত্যিই মনোগ্রাহী। হাঁটা চলায়, কথা বলায়, চোখের চাউনিতে সৌমিত্রর ময়ূরবাহন একেবারে দুর্দান্ত,- আভিজাত্য আর বেপরোয়া, বেলাগামপনার একেবারে প্রতিমূর্তি। সম্ভবত এই প্রথম বাংলা সিনেমা এমন এক খলনায়ককে দেখল যাকে ঠিক ঘৃণা করা চলেনা। তার স্পর্ধা বা দর্পের একটা অদ্ভুত আকর্ষণ আছে। আধুনিক যুগে অবশ্য এরকম খলনায়করা খুব দুর্লভ নয়।
ভাবলে অবাক হতে হয়, একই সময়ে তিনি সত্যজিতের সমাপ্তিরও নায়ক। সে চরিত্রে তিনি আদ্যন্ত প্রেমিক ও স্বামী। দুই বিখ্যাত পরিচালকের এমন দুই সাহিত্য নির্ভর চরিত্রে সৌমিত্র অভিনয় করছেন যে চরিত্রদুটি সম্পূর্ণ দুই ভিন্ন মেরুর বাসিন্দা। এবং দুটিতেই তিনি সফল।
আঙ্গিকগত ভাবে খুঁটিয়ে দেখলে এই ছবির হয়তো বেশ কিছু দোষ ধরা যেতে পারে, কিন্তু উত্তম-সৌমিত্রের এই অসাধারণ যুগলবন্দীর জন্য ছবিটির শৈল্পিক আর ঐতিহাসিক মূল্য থাকবেই। আর বাংলার তৎকালীন দর্শকরাও ধন্যবাদার্হ, এইরকম একটি ব্যতিক্রমী চরিত্রে সৌমিত্রকে তাঁরা মেনে নিয়েছিলেন এবং ছবিটি বক্স অফিসের আনুকূল্য পেতে সক্ষম হয়েছিল।

১ –রবীন্দ্র রচনাবলী – ইন্টারনেট সংস্করণ – http://www.rabindra-rachanabali.nltr.org/node/7498
২- বিষয় চলচ্চিত্র – অষ্টম মুদ্রণ, সেপ্টেম্বর – ২০০৯ – পৃ = ৯৯
৩- বিষয় চলচ্চিত্র – অষ্টম মুদ্রণ, সেপ্টেম্বর – ২০০৯ – পৃ = ৯৯
৪ – https://en.wikipedia.org/wiki/Bilwamangal
৫ – শতবর্ষে চলচ্চিত্র –নির্মাল্য আচার্য ও দিব্যেন্দু পালিত সম্পাদিত, আনন্দ, প্রথম সংস্করণ, পঞ্চম মুদ্রণ, মে – ২০১৪ – পৃ = ৫৫৯
৬ – বাংলা সাহিত্য ও বাংলা চলচ্চিত্র, প্রথম খণ্ড –নিশীথকুমার মুখোপাধ্যায়, নাভানা, প্রথম প্রকাশ, মে – ১৯৫৯ – পৃ = ৭৬
৭ – চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নিউ থিয়েটার্স, পিনাকী চক্রবর্তী, আনন্দ, প্রথম সংস্করণ, দ্বিতীয় মুদ্রণ – মে, ২০০৮ – পৃ = ২০ – ২১
৮ – চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নিউ থিয়েটার্স, পিনাকী চক্রবর্তী, আনন্দ, প্রথম সংস্করণ, দ্বিতীয় মুদ্রণ – মে, ২০০৮ – পৃ = ৪৩ – ৪৪
৯– চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নিউ থিয়েটার্স, পিনাকী চক্রবর্তী, আনন্দ, প্রথম সংস্করণ, দ্বিতীয় মুদ্রণ – মে, ২০০৮ – পৃ = ৪৪
১০ – মহাপ্রস্থানের পথে – প্রবোধ কুমার সান্যাল –মিত্র – ঘোষ, ত্রিশ মুদ্রণ, জ্যৈষ্ঠ – ১৪২২, পশ্চাৎ-প্রচ্ছদ
১১ – পরশুরাম গল্প সমগ্র, প্রথম অখণ্ড সংস্করণ, এম সি সরকার, নভেম্বর, ১৯৯২ – পৃ = ৩৬
১২ – পরশুরাম গল্প সমগ্র, প্রথম অখণ্ড সংস্করণ, এম সি সরকার, নভেম্বর, ১৯৯২ – পৃ = ৬৪৪
১৩ – পরশুরাম গল্প সমগ্র, প্রথম অখণ্ড সংস্করণ, এম সি সরকার, নভেম্বর, ১৯৯২ – পৃ = ২৯৫
১৪ – পরশুরাম গল্প সমগ্র, প্রথম অখণ্ড সংস্করণ, এম সি সরকার, নভেম্বর, ১৯৯২ – পৃ = ৩০০
১৫ – পরশুরাম গল্প সমগ্র, প্রথম অখণ্ড সংস্করণ, এম সি সরকার, নভেম্বর, ১৯৯২ – পৃ = ২৯৬
১৬ – পরশুরাম গল্প সমগ্র, প্রথম অখণ্ড সংস্করণ, এম সি সরকার, নভেম্বর, ১৯৯২ – পৃ = ২৯৮
সমস্ত ছবিগুলিই ইন্টারনেট থেকে নেওয়া
প্রথম প্রকাশ – বহুস্বর পত্রিকা, বইমেলা সংখ্যা, ২০১৭
বহুস্বরের ওয়েবসাইট –
ভালো লাগলো। বিষয়টি নিয়ে লেখকের থেকে আরও বিস্তৃত আলোচনা প্রত্যাশিত ।
LikeLiked by 1 person
অনেক ধন্যবাদ, শিবাংশুদা। আরো একটি পর্ব আছে।
LikeLike