এই পর্বে লিখছি দ্বিতীয় পত্রিকাটি আর তার সম্পাদকের কথা।
পাঠভবন স্কুলে আমি দুবছর মাত্র পড়েছি। কিন্তু সেইসময়েই কিছু ভাল শিক্ষকের দেখা পেয়েছিলাম, তাঁদের মধ্যে একজন হলেন বাংলার শিক্ষক শ্রী অজয় রায়। তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছি, কেউ ইচ্ছে হলে পড়ে দেখতে পারেন। লিংকটি রইল এখানে http://www.abasar.net/myteacher3_bhaskar.htm
পরবর্তী কালে ফেসবুকের সুবাদে জানতে পারলাম যে অজয়দা ‘বহুস্বর’ নামের একটি পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত। ফেসবুকের এক বন্ধু D: কৃষ্ণলাল সরকারের কাছ থেকেই তা জানলাম। আমি যাতে পড়তে পারি, তারজন্য কৃষ্ণলালবাবু বহুস্বর পত্রিকাও পাঠালেন। দেখে বেশ মুগ্ধ হলাম। তারপরে তিনি আবার প্রস্তাব দিলেন ওঁদের পত্রিকাতে লেখার জন্য। ‘বহুস্বর’ পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীতে আছেন শ্রী বিভাস ভট্টাচার্য যিনি অজয়দার আত্মীয়, তিনি আবার প্রবন্ধ বিভাগটি দেখাশোনা করেন।
তারপরে বিভাসের সঙ্গেও আলাপ হল। প্রবন্ধের কথায় জানালাম একটি নতুন বিষয় নিয়ে আমি লিখতে উৎসাহী।
আসলে তখন আমি একটু সত্যজিতের ‘বিষয় চলচ্চিত্র’, মৃণাল সেনের ‘আমার ভুবন’ আর ঋত্বিক ঘটকের উপর লিখিত ‘ঋত্বিক’ ও আরো একটি বই পড়ছিলাম। ভাবছিলাম এঁরা যখন বিখ্যাত চলচ্চিত্রগুলি সৃষ্টি করেছিলেন, কিরকম ভাবনা ছিল তাঁদের। আরো একটা ভাবনা ছিল যে বাংলাতে এখনো কি সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্র হতে পারে বা তা প্রাসঙ্গিক কিনা। ওঁকে জানালাম ও সে কথা। উনিও রাজী হলেন।
এই লেখার ব্যাপারে বিভাস আমাকে প্রভূত সাহায্য করেছিলেন। মোটামুটি লেখার রূপরেখা কি হতে পারে তার একটা ধারণা দিয়েছিলেন। উৎসাহিত হয়ে আমিও আরো বেশ কিছু বই যোগাড় করে ফেললাম।
হিসেব করে দেখা গেল প্রবন্ধের শব্দসংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৭০০০ – ৮০০০। সর্বনাশ! এত বড় প্রবন্ধ কি ছাপা যাবে? বিভাস জানালেন কোন চিন্তা নেই – দুভাগে ছাপা যেতে পারে। প্রথমটি প্রকাশিত হবে ২০১৭র বইমেলা সংখ্যাতে আর পরেরটি ২০১৭র শারদ সংখ্যাতে।
উৎসাহিত হয়ে আমিও লেগে পড়লাম। কালক্রমে দুটি লেখাই শেষ হল এবং সঠিক সময়ে প্রকাশিতও হল।
পরে এই দুটি লেখা তাঁদের ওয়েবসাইটেও প্রকাশিত হয়। আমিও আমার ব্লগে তাদের প্রকাশ করেছি
https://bhaskarbose.com/2018/06/12/bangla-chalaccitra-sahitya/
https://bhaskarbose.com/2018/06/19/bangla-sahitya-chalachitra-2/
ইতিমধ্যে ২০১৭র বইমেলাতে চাক্ষুষ পরিচয় হয়ে গেল। আমার হাতে অন্য দুটি সঙ্কলনে আমার লেখাগুলি দেখে তাঁর ভাল লেগে থাকবে। পরের বইমেলা অর্থাৎ ২০১৮র বইমেলার জন্য একটি লেখার কথা বলেছিলেন। আমি জানিয়েছিলাম, ২০০৪ সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ব্যাঙ্গালোরে এসেছিলেন, ভারী চমৎকার কেটেছিল একটি সন্ধ্যা। তাই নিয়ে লিখতে পারি। ব্যাঙ্গালোর ফিরে পাঠাবো দেখুন পছন্দ হয় কিনা। সে তো হল।
এইসময় বিভাস আমাকে জানালেন যে বহুস্বরের একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশের ইচ্ছে – প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ নিয়ে। আমি প্রথমেই মাপ চেয়ে নিলাম, কারণ ব্যাঙ্গালোরে বসে এই লেখা খুব দুঃসাধ্য। কিন্তু বিভাসের ধারণা – আমি পারবো। খুবই সংশয়ের সঙ্গে জানালাম, একটা বিষয় নিয়ে ভেবেছিলাম লেখার কথা। সেটা হল পারস্পরিক নির্ভরশীলতা – লেখক ও শিল্পীদের মধ্যে। বিভাস লাফিয়ে উঠলে, “হবে হবে, আমি জানতাম”! এরপরে মেল করে আমাকে কিছু ওয়েবসাইটের ঠিকানা ও দিলেন, বইয়ের নাম, যাঁরা কাজ করেছেন তাঁদের কথাও জানালেন।
কি আর করা! “চোখের বালি” মনে পড়ে গেল –
মহেন্দ্র উন্মত্ত হইয়া গদ্গদকণ্ঠে বলিয়া উঠিল, “বিনোদিনী, তবে আমার ভালোবাসা তুমি পায়ে ঠেলিবে না?”
বিনোদিনী কহিল, “মাথায় করিয়া রাখিব। ভালোবাসা আমি জন্মাবধি এত বেশি পাই নাই যে, ‘চাই না’ বলিয়া ফিরাইয়া দিতে পারি।”
লেখক জন্মাবধিও এইরকম দুরূহ বিষয়ে লেখার ব্যাপারে আমার ক্ষমতা সম্পর্কে যিনি এতটাই প্রত্যয়ী, তাকে তো আমিও “মাথায় করিয়া রাখিব।”
ব্যস! শুরু হল আমার চর্চা। এতাবৎ যা লিখেছি, তার চাইতে অনেক বেশী সময় দিতে হয়েছে এই লেখার পিছনে। তবুও সংশয়। তবে সম্পাদক যখন বলেছেন, তখন ভরসা তো আছেই।
পত্রিকাতে আরো অনেক ভালো লেখা থাকছে। পুরো সূচিপত্র এখানে –
👍 Daroon
LikeLike