ভিক্ষা নিতে গেলেন তিনি

screenshot_20180818-204852

আজ দেবব্রত বিশ্বাসের  মৃত্যুদিন।

১৯৮০ সালে যখন এই দিনে  চলে যান, তখন আমরা কৈশোর পার হয়ে যৌবনে পা দিয়েছি। সদ্যই বাঙালী হারিয়েছে তাঁদের প্রাণের মানুষ উত্তমকুমারকে।

পাঠভবনে একটি শোকদিবস পালন হয়েছিল, গান করেছিলেন অর্ঘ্য সেন। এর আগে   কে খবর এনেছিল উনি ২৫শে বৈশাখ নাকি চোখে রোদচশমা পরে লুকিয়ে রবীন্দ্রসদনে অনুষ্ঠান শুনতে এসেছিলেন। কি কাণ্ড!

এককালে মোটর বাইকে তিনি কলকাতা চষে বেড়াতেন। কত গল্পই শোনা যায়।

তবে সবচেয়ে প্রিয় গল্প পুলিন বিহারী সেনকে নিয়ে। একবার ওঁর বাড়িতে গিয়ে  গান শুনিয়ে মুগ্ধ করেন তিনি।  পুলিন তাঁকে জড়িয়ে ধরেন, “আহা,  কি অপূর্ব সব গান লিখেছেন বল জর্জ”!

দেবব্রত শুনে টুনে একটু বেশ তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলেন। বেরিয়ে একেবারে মোটর বাইক নিয়ে হাওয়া। অবাক পুলিন।

পরে কেউ তাঁকে জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিলেন,

” উনি গুরুদেবের লেখাটির কথা বললেন, আর আমার গাওয়ার কথা তো একটুও বললেন না!”

বোঝ! এই অভিমান অবশ্য তাঁকেই মানায়।

আমাদের দেবব্রতর সঙ্গে পরিচয় খুব ছোটবেলাতেই।

তখন সম্ভবত ১৯৬৯ বা ৭০ সাল। আমাদের বয়স এক অঙ্ক।

দেবব্রতর যে সব গানগুলি রেকর্ডে শুনে মুগ্ধ হয়েছি সেগুলি – “মেঘ বলেছে” “গোধুলি গগনে” “আকাশভরা” “যে রাতে মোর” ইত্যাদি।

তবে গাইতে সুবিধে হত বলে সবচেয়ে প্রিয় ছিল “তোরা যে যা বলিস ভাই” – বিশেষতঃ “সে যে চমকে বেড়ায় –” !! খুব আনন্দ পেতাম।

আমাদের প্রাইমারি স্কুলে সকালবেলা স্কুল শেষ করে বাড়ী ফিরতাম প্রায় ১১ তা নাগাদ। তারপর আমরা যখন দুপুরে খেতাম, তখন রেডিওতে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজতো।

এরকম হঠাৎ ই শুনি, সে গলাতেই,

“আমি যখন তাঁর দুয়ারে ভিক্ষা নিতে যাই
তখন যাহা পাই
সে যে আমি হারাই বারে বারে ॥

তিনি যখন ভিক্ষা নিতে আসেন আমার দ্বারে
বন্ধ তালা ভেঙে দেখি আপন-মাঝে গোপন রতনভার,
হারায় না সে আর ॥”

এ কি রে বাবা!! আমাদের বাড়ীতেও তো ভিক্ষে নিতে আসে, গান শোনায় আমরা ভিক্ষে দিই। মামার বাড়ীতে ও আসে। সেখানে আবার নিয়ম, গান গাইলে ২ পয়সা ভিক্ষে আর গান না গাইলে ১ পয়সা। আমরা তো কখনো উলটো ভিক্ষে চাই না! কি মুশকিল!

পরে আরো সব গুলিয়ে গেল, মানে এখন যাকে “সঞ্চারী” বলে তাতে গিয়ে –

“প্রভাত আসে তাঁহার কাছে আলোক ভিক্ষা নিতে,
সে আলো তার লুটায় ধরণীতে” —

কিন্তু না বুঝেও গায়কীর মধ্যে যেন কি এক অদ্ভুত মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। কি এক শিহরণ !!

এখন কারণ বুঝি! কিন্তু মাঝে মাঝেই মনে পড়ে সেই ছোট্ট বেলার সেই না বোঝা মুগ্ধতা।

এখনো সেই শিশুকাল কাটলো না –

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s