হারিঝি – চণ্ডী, বিভূতিভূষণ, মেঘের স্বপ্নপুরী

আজ বিভূতিভূষণের জন্মদিন। তাঁর জীবনে জড়িয়ে আছে রাজপুর – হরিনাভি অঞ্চল।

বিভূতিভূষণের ডায়রিতে পাচ্ছি –

১৯৩৫

কাল রাজপুর বেড়াতে গিয়ে অপূর্ব জ্যোৎস্নালোকে হারিঝি-চণ্ডীর মাঠে বসেছিলুম। আমি আর ভম্বলাই(২)।

১৯৩৬

গত রবিবারে রাজপুর গিয়ে বেগুন(৩) ও আমি হারিঝি-চণ্ডী মাঠের ধারে সন্ধ্যায় বসেছিলুমঅনেকক্ষণ

২ ভম্বল ভট্টাচাৰ্য, রাজপুরবাসী৩ অমরেন্দ্ৰনাথ লাহিড়ী, রাজপুরবাসী

 

এই হারিঝি-চণ্ডীর মাঠ আমাদের বাল্যকাল জুড়ে আছে। আমাদের বাড়ি থেকে কিছু দূরেই এই মাঠ ছিল আমাদের কাছে এক খোলা দিগন্ত। আমরা অবশ্য এততা সুন্দর উচ্চারণ করতে পারতাম না – হাড্ডিচণ্ডীর মাঠ নামেই তা প্রচলিত ছিল।

বিস্তারিত এই ধুধু মাঠের মধ্যে দিয়েই চলে গেছে ট্রেনলাইন। শীতকালে এনুয়াল পরীক্ষার পর আমাদের পিকনিকের জন্য উপযুক্ত স্থান ছিল এটি। এছাড়া শীতের দিনে বেশ বেড়াতে যাওয়া উপলক্ষও ছিল বিভূতিভূষণের এই মাঠটি। আলপথ ধরে ধরে হেঁটে গেলে বেশ লাগতো। চাষের জমিও ছিল অনেক।

সেখানে গেলেই দেখা যেত –

খলসোমারির বিলের প্ৰান্তে ধন সবুজ আউশ ধানের ক্ষেতের উপরকার বৃষ্টি-ধৌত, ভাদ্রের আকাশের সুনীল প্রসার। সারা চক্রবাল জুডিয়া সুৰ্য্যাস্তের অপরূপ বর্ণচ্ছটা, বিচিত্র রং-এর মেঘের পাহাড়, মেঘের দ্বীপ, মেঘের সমুদ্র, মেঘের স্বপ্নপুরী-খোলা আকাশের সহিত এরকম পরিচয় তাহার এতদিন হয় নাই, মাঠের পারের দূরের দেশটা এবার তাহার রহস্য-অবগুণ্ঠন খুলিল আট বছরের ছেলেটির কাছে

যখন আমরা এই অংশ পড়ি তখন আমাদেরও প্রায় এইরকম বয়েস। হারিঝি-চণ্ডীর মাঠে কিন্তু কল্পনা নয়, বাস্তবিকই এই সবই দৃশ্যমান ছিল।

সুতরাং ভাবতে কোনই বাধা ছিলনা যে বিভূতিভূষণের নিশ্চিন্দিপুর আমাদের ওদিকেই।

ঐ মাঠের মাঝখান দিয়ে ছিল রেলপথ – সোনারপুর আর সুভাষগ্রাম স্টেশনের মধ্যবর্তী জায়গাতেই তো ঐ মাঠ।

এবারে তো নিঃসন্দেহ, না, না উত্তর নয়, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ঐ জায়গাতেই ছিল ‘নিশিন্দিপুর’!

আমরাও যা দেখেছি, উনিও তাই দেখেছেন। উঃ, ভাবতেই গায়ে কাঁটা দেয় যে যখন বিভূতিভূষণ ঐ উপরের পংক্তিগুলি লিখছেন, তাঁর চোখের সামনে রয়ে গেছে হারিজি চণ্ডীর মাঠ।

 

 

6 thoughts on “হারিঝি – চণ্ডী, বিভূতিভূষণ, মেঘের স্বপ্নপুরী

  1. আমাদের গুসকরার সীমারেখা ধরে বয়ে যাওয়া কুনুর নদীর উপকুলে ছিল ২০০ বছরের পুরানো শিব মন্দির, আর শিব বাগান মানে আমাদের ফুটবল খেলার মাঠ, মনে পড়ে গেল সেই দিন গুলোর কথা,
    ধন্যবাদ ভাস্কর

    Like

  2. আমরা বলতাম হাঁড়িচন্ডীর মাঠ । লেখাটা দারুণ ভাস্কর । বিভূতি ভূষণ বন্দোপাধ্যায় আমাদের স্কুলের শিক্ষক ছিলেন এটা নিয়ে আমরা গর্বিত । তাই ওঁনাদের সম্পর্কে আরো বেশী জানার আগ্রহ রইল । ভালো থাকিস রে !!!!!

    Liked by 1 person

Leave a reply to Somnath Banerjee Cancel reply