অপরিহরণীয়

মৃত্যু কহে, পুত্র নিব; চোর কহে ধন।
ভাগ্য কহে, সব নিব যা তোর আপন।
নিন্দুক কহিল, লব তব যশোভার।
কবি কহে, কে লইবে আনন্দ আমার?

উপরোক্ত পংক্তিটি যে কবির রচনা, উল্লিখিত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাগুলি তাঁর জীবনে কল্পনা নয়, একেবারে নির্মম সত্য। মৃত্যু তাঁর পুত্র কন্যা, নিয়েছে – একাধিকবার।

নিন্দুকরা তো তাঁর যশোভার নেওয়ার জন্য এতই ব্যগ্র ছিল যে তিনি অভিমানী হয়ে মৃত্যুর আগে ‘সার্থক জনম আমার, জন্মেছি এই দেশে’ পংক্তিটি কেটে দিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন।

কিন্তু এত কিছু সত্বেও তিনি তাঁর কবিত্ব হারাননি, বরঞ্চ আরো জোরে আঁকড়ে ধরেছেন তাঁর কলমকে। জীবনের অজস্র দুঃখ, বঞ্চনাকে সঙ্গী করে এক অপূর্ব আলোতে প্রাণের প্রদীপ জ্বালালেন, আমাদের জন্য।

এখানে কিন্তু কবি বলতে সকল সৃষ্টিশীল মানুষকেই বোঝানো হচ্ছে, – শিল্পী, বৈজ্ঞানিক, কর্মী, গায়ক, নায়ক –!! বস্তুতঃ, সকল মানুষকেই সৃষ্টিশীল হওয়ার উদাত্ত আহ্বান ও এক অভ্রান্ত পথনির্দেশ – কারণ সৃষ্টির আনন্দই দুঃখ ভোলার মহৌষধ। সম্প্রতি একটি বই হস্তগত হয়েছে।

The War of Art”

লেখকের নাম Steven Pressfield

একটি মূল সূত্র রূপে লেখক বলছেন –

“We must do our work for its own sake, not for fortune or attention or applause.”

খুব সহজ ভাবে আমরা এর একটি বাস্তব উদাহরণ ভাবতে পারি – যে কোন অধস্তন কর্মচারী তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কে বলেই থাকতে পারেন – “তুমি আমার পদোন্নতি না করাতে পার, আমাকে শুধু শুধু গালমন্দ করতে পার, কিন্তু কাজ করে আমি যে আনন্দ পাই সেটা তো আর কাড়তে পারবে না”!!

শুনতে একটু অন্যরকম লাগলেও এতে আখেরে তাঁরই লাভ। তিনি মানসিক বা দৈহিক ভাবে সুস্থ থাকবেন। Steven Pressfield একটি চমৎকার উদাহরণ দিয়েছেন।

তাঁর শরীর খারাপ ছিল। কিছুই ভাল লাগছিল না। কি করবেন, চিন্তা করতে করতে লিখতে বসে গেলেন। কি আশ্চর্য! এত ভাল লাগলো লিখতে, শরীর খারাপ উধাও।

আরো উদাহরণ দিয়েছেন –

কর্কট রোগে আক্রান্ত সেই রুগীর গল্পটি মনে পড়ে? মাত্র ছমাস বাঁচার আছে জেনে যিনি নিজের সাধ পূরণের জন্য সব কিছু ছেড়ে গান শিখতে আরম্ভ করলেন? আনন্দ তো পেলেনই, আবার দেখা গেল রোগের ও বিস্তর উন্নতি ঘটেছে।

নিঃসন্দেহে খুবই কঠিন কাজ, কিন্তু চেষ্টা করতে ক্ষতি নেই। Steven Pressfield বলছেন,

“The most important thing about art is to work. Nothing else matters except sitting down every day and trying.”

আর হাজার হোক আমাদের গুরু তো বলেছেন তাঁর নিজের জীবনলব্ধ অভিজ্ঞতা থেকে –

কবি কহে, কে লইবে আনন্দ আমার”!!

2 thoughts on “অপরিহরণীয়

    1. খুব চমৎকার লিখেছো। এই লেখা খুব অনুপ্রেরণা দেয় আমাদের। ভাবিয়ে তোলে, নিজের চিন্তাধারা কে আরো বিকশিত করতে সাহায্য করে।

      Like

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s