তোমার সঙ্গে প্রথম আলাপ এই গানের গ্রুপেই, যার নাম – Bengali Music। বিভিন্ন গানের পোস্টে কিছু কথা লিখে দিতাম, খুব পছন্দ করতে তুমি। আর যদি কোন থীম লিখতাম, জয়িতা আর তুমি উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠতে। গ্রুপের বাইরেও বন্ধুত্ব আমাদের বেড়েছিল। আমার প্রায় প্রত্যেক পোস্টেই তোমার নিয়মিত মন্তব্য পাওয়াটা আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। সদ্য পরিচিত হওয়ার পর, ২০১৫ সালে, একবার আমি খুব অল্প ক’দিনের জন্য কলকাতায় গিয়েছিলাম। ছবিও দিয়েছিলাম ক’য়েকটি। তুমি পড়ে মন্তব্য করেছিলে, ‘ভাস্করদার কলকাতায় পা পড়েছে বুঝি! জানালেন না তো?’
আসলে তখন এতটা গভীর আলাপ ছিল না, কাজেই অল্পদিনে দেখা করার কথা আদৌ ভাবিনি। তবে দেখা হল কিছুদিন পরেই। ২০১৭র বইমেলাতে। ‘অবসর’ এর আড্ডাতে। তখন তোমার অবসর পত্রিকার সুজনদা এবং ঈশানীর সঙ্গেও আলাপ হয়ে গেছে। তাই তোমার চট করে মানিয়ে নিতে কোন কষ্ট হয়নি। রইল সে ছবি।

এরপরেও তো আরো পরিচয় বেড়েছে। সম্ভবতঃ পরের বছরের বইমেলাতেই আমার মনে আছে আমি, তুমি আর স্নেহাশিস, বেশ আলাদা করে সময় বার করে বেশ অনেকক্ষণ আড্ডা মারতে পেরেছিলাম। খুব মজা লেগেছিল। স্নেহাশিস আবার সেদিন গাভাসকারের সঙ্গে দেখা করে এসেছিল, খুব উচ্ছ্বসিত ছিল। আমি আর তুমি তাই নিয়ে ওর সঙ্গে একটু মজাও করছিলাম। ক’বছর আগের কথা, কিন্তু মনে হচ্ছে যেন ক’দিন আগেই।

পরের বার ২০১৯ এ বইমেলাতে সম্ভবতঃ তুমি আসতে পারনি। কিন্তু সেই জানুয়ারিতে আমাদের একটা খুব, খুব দারুণ আড্ডা হয়েছিল। তুমিই ছিলে মূল উদ্যোক্তা। আমি, প্রসূন, স্নেহাশিস, মৌমিতা আর তুমি। খুব মজা করে গল্প করে আমার আনন্দ হয়েছিল। আগে দেখতাম, মাঝে মাঝে তোমরা কলকাতায় মিট করতে, কিন্তু যোগাযোগের অভাবে সেই অনুষ্ঠানে আমি থাকতে পারিনি। তাই এবার আর কোন চান্স নিইনি। যাবার আগেই তোমাকে আমার সব প্রোগ্রাম জানিয়েছিলাম যাতে তুমি ঠিক ব্যবস্থা করতে পার। দু-একদিন এদিক ওদিক করে ঠিক ব্যবস্থা করে সবাইকে হাজির করেছিলে। ঐ সন্ধ্যাটা আমার চিরজীবনের সঞ্চয়। সত্যিই, জয়িতা যে বলেছে ভার্চুয়াল মাধ্যমেও যে বন্ধুত্ব কতটা গভীরে যেতে পারে তা আমরা তোমাকে দেখে অনুভব করতে পারি।

ঈশানীর সঙ্গে তোমার পরিচয় আমার সূত্রেই, ফেসবুকেই। ও আমাকে জানিয়েছিল ওর মার অসুখে সাহায্য করার জন্য তুমি ছুটি নিয়ে ওর পাশে দাঁড়িয়েছিলে। যেদিন ওকে খবরটা জানিয়েছিলাম, সেদিন বলেছিল, ও আগেই জেনেছে কিন্তু এত মর্মান্তিক খবর যে ওর মা’কে ও জানাতেই পারবে না। কারণ ওর মাও তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছেন। এই ছোট্ট ঘটনাই বুঝিয়ে দেয় তুমি কত সহজে মানুষকে আপন করে নিতে পারতে।


তোমার চলে যাওয়াটাও এল ভীষণ অতর্কিতেই। প্রথমবার যখন অসুস্থ হলে, আমি ভেবেছিলাম সেটা এমনকিছু বড়ো ব্যাপার নয়। আমার কাছের বেশ কিছু মানুষ এই অতিমারীতে অসুস্থ হয়ে আবার বেশ কিছুদিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে গেছে, অফিস করছে। আমি ভেবেছিলাম সেরকমই। দ্বিতীয়বার জয়িতা যখন এত ভেঙে পড়ে আমাকে জানাচ্ছিল, তা’ও আমার বিশ্বাস হয়নি। এমনকি শেষ অবধি – ! কিন্তু হারতেই হল বর্ণালী। তুমি এবারে আর নতুন থীম লেখার কথা রাখলে না। তোমাকে হারিয়ে আমাদের পৃথিবীটা আরো বর্ণহীন হয়ে গেল।
তুমি ভালো থেক বর্ণালী। আজ তোমার জন্মদিনে এই শুভেচ্ছাই রইল। মনে পড়ে, তুমি বলতে আমাদের ‘বসু’দের অন্য ব্যাপার পুরো। একটা প্রিয় কবিতার কিয়দংশ রইল –
যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে, অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে- বুঝবে সেদিন বুঝবে!
তুমি গান নিয়ে আমার লেখা পছন্দ করতে, তাই একটু লিখি। আমার প্রিয় সলিল চৌধুরী। তুমি তোমার যাত্রা শেষ করে ফিরে গেছ, আমাদের পথচলা এখনো বাকি।
জীবন বৃন্তের থেকে ঝরে কত না স্বপ্ন না গেছে মরে। তবুও পথ চলা কবে যে শেষ হবে জানি না।।
সত্যি তোমার কথা আমাদের কাছে – স্মৃতিরা যেন জোনাকির ঝিকিমিকি, ঝিকিমিকি।।