গত বছর, ২০২০ র বাইশে সেপ্টেম্বর অতিমারীর মধ্যেই কেটে গিয়েছিল তাঁর মৃত্যুর পঞ্চাশ বর্ষপূরণ।
কথায় বলে এক লেখকের প্রকৃত জন্ম শুরু হয় তাঁর মৃত্যুর পর। তাঁর মৃত্যুর পঞ্চাশ বছর পরেও তাঁর জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে আজও আধুনিক প্রজন্মের কাছেও তিনি কতটা প্রাসঙ্গিক। বস্তুতঃ শুধু ব্যোমকেশ নয়, তাঁর ঐতিহাসিক সমগ্রের জনপ্রিয়তাও যে কোন জনপ্রিয়তম আধুনিক লেখকের যে কোন লেখার সঙ্গেই পাল্লা দিতে পারে।
আগামী ৩০শে মার্চ তাঁর জন্মদিন। এই উপলক্ষে প্রকাশক ‘দ্য কাফে টেবিল’ নিয়ে এলেন তাঁদের শরদিন্দু সংক্রান্ত গ্রন্থ ‘চিরায়ত শরদিন্দু’র ওপর বিশেষ মূল্যহ্রাস।
আগামী ২৮শে মার্চ, ২০২১ থেকে ৪ঠা এপ্রিল পর্যন্ত শরদিন্দুর জন্মদিন উপলক্ষে এই বিশেষ মূল্যহ্রাসের পরিমাণ – ৩০%।

অর্থাৎ ৩২৫ টাকার বইটি পাওয়া যাবে ২২৭.৫0 টাকায়।
বইটি সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করতে হবে প্রকাশকের ওয়েবসাইটে।
https://thecafetable.com/Chirayoto-Sharadindu
এই বইটির এক মূল আকর্ষণ পল্লব চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক গৃহীত শরদিন্দু পুত্র শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক বিস্তারিত সাক্ষাৎকার। অকপট ভাষায় তিনি জানালেন তাঁর বাবা ও সাহিত্যিক শরদিন্দুকে নিয়ে তাঁর মতামত। শরদিন্দুর বিভিন্ন ছবির চিত্রায়ণ সম্পর্কে তাঁর বিভিন্ন মতামত খুবই উল্লেখযোগ্য।
সেই সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ –

পল্লব।। ওঁর ‘চলচ্চিত্র প্রবেশিকা’ গল্পে বোম্বে আসার বেশ একটা ছবি পাওয়া যায়। বোম্বের বাঙালী শিল্পীদের সঙ্গে ওঁর নিশ্চয়ই পরিচিতি ছিল?
শান্তনু।। সে তো ছিলই। বিমল রায় সপরিবারে আমাদের বাড়ীতে নিয়মিত আসতেন, মুম্বাইতে আমার বিয়ের প্রীতিভোজেও ছিলেন। আর একটা মজার কথা হল, অশোক কুমার আসতেন। বাবার জ্যোতিষচর্চার নেশা দেখে তিনি বাবার কাছে জ্যোতিষ শিখতে শুরু করলেন। এছাড়া হৃষীকেশ মুখার্জীর হাত দেখে বলেছিলেন বোম্বেতেই থেকে যেতে।
পল্লব।। বাঃ! দারুণ তো! সম্প্রতি শচীনদেব বর্মণের জীবনের ওপর লেখা একটি বইতে পড়ছিলাম, উনি যখন সপরিবার বোম্বে আসেন, ওঁকে স্টেশনে আনতে গিয়েছিলেন শরদিন্দু।

পল্লব।। — আচ্ছা, একটা বিষয় আমাদের ভীষণ আকৃষ্ট করে। শরদিন্দুর পুনা ও মরাঠা প্রেম। উনি মরাঠি ভাষা কতটা জানতেন? ওঁর এত মরাঠি বন্ধুবান্ধব ছিল, মরাঠি ভাষায় তাঁর কিছু রচনা কি অনূদিত হয়েছে।
শান্তনু।। মরাঠি বার্তালাপ তো শিখতেই হয়েছিল। উনি থাকতেন পুনা শহরের তখনকার হিসেবে একটু বাইরের দিকে, SP College, শিবাজিনগরের কাছে, পার্বতী-মন্দিরের একেবারে কাছাকাছি একটি বাড়িতে। মরাঠি বন্ধু অনেক ছিল, তার মধ্যে কিছু সাহিত্যিকও। কিন্তু তাঁর কোন লেখা মরাঠিতে অনুবাদ হয়েছে বলে জানিনা। —-তাঁর মরাঠি বন্ধুদের অধিকাংশই ছিল ফিল্ম-লাইনের যদিও ১৯৪৩ সালে বোম্বের একটা সাহিত্য সভাতেও তাঁকে যোগ দিতে দেখেছি। মরাঠা-দেশ আর সেখানকার মানুষকে উনি ভালবেসে ফেলেছিলেন। সদাশিবের গল্পগুলো তো কিংবদন্তী। আর শিবাজীকে নিয়ে ছিল তাঁর মুগ্ধতা। ইতিহাস-ভিত্তিক গল্পগুলির মধ্যে শিবাজির কৈশোরের ঘটনা নিয়ে লেখা ‘বাঘের বাচ্চা’ পড়ে দেখ, পশ্চিমঘাটের পাহাড়ি অঞ্চলের কী নিখুঁত বিবরণ! বালক শিবাজির মধ্যে যে নেতৃত্বগুণ কিভাবে বিকাশ পেয়েছিল তার ভারি সুন্দর আর মনোগ্রাহী বর্ণনা আছে।

পল্লব।। ব্যোমকেশ প্রসঙ্গ যখন এসেই গেল, ব্যোমকেশের চলচ্চিত্রায়ন নিয়ে আপনার কী মত? শরদিন্দু তো চিড়িয়াখানা দেখে সন্তুষ্ট হননি।
শান্তনু।। সত্যজিৎ রায় দুনিয়ার একজন সেরা ডিরেক্টর, তিনি গল্পটাকে নিয়ে ওরকম ছেলেমানুষি করলেন কেন বুঝিনা। ———-অঞ্জন দত্তের পরিচালনা মন্দ নয়, তবে একটা চরম অসঙ্গতি চোখে ঠেকেছে। যে মহীধর চৌধুরি এত রক্ষণশীল যে তাঁর বিধবা মেয়েকে যোগ্য পাত্রে দান করতেও আপত্তি, তাঁরই বাসায় পার্টিতে মদের ফোয়ারা ছোটে। বাবার গল্পে কিন্তু চায়ের পার্টি ছিল। ——-আর দিবাকর ব্যানার্জীর হিন্দি ব্যোমকেশ আমার চেনা চরিত্র নয়, এ সম্বন্ধে কোন মন্তব্য করব না। বরং বাসু চ্যাটার্জির হিন্দি টেলিভিশনের জন্যে তৈরি এপিসোডগুলো আমার তখন তত ভাল না লাগলেও, অন্য প্রচেষ্টাগুলো দেখার পর মনে হয়েছে ওগুলো অনেক ভাল ছিল, বিশেষ করে ব্যোমকেশের ভূমিকায় রজিত কাপুর ছেলেটিকে খুব মানিয়েছিল। সেদিন বাংলা টেলিভিশনে ‘চোরাবালি’ গল্পে দেখলাম কুমার ত্রিদিব রাইফেল দিয়ে পাখি শিকার করছে আর অদ্ভুতভাবে চোখের সামনে ধরে সেটা চালাচ্ছে। ডিরেক্টর কি হোমওয়ার্কটাও ঠিকঠাক করে আসেন নি।
পল্লব।। ব্যোমকেশ ছাড়া অন্যান্য কাহিনী? ঝিন্দের বন্দী, রাজদ্রোহী, মনচোরা, দাদার কীর্তি, তৃষাগ্নি (মরু ও সঙ্ঘ)?
শান্তনু।। ——– দাদার কীর্তির চিত্রায়ন আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে, চিত্রনাট্য, পরিচালনা, অভিনয় সবই নিখুঁত। সরস্বতী আর লীলাবতীকে দুই বোনই মনে হয়েছে আমার। আচ্ছা, অভিনয় যারা করেছে তারা কি সহোদর বোন?
পল্লব।। না, একজন মহুয়া রায়চৌধুরি, অন্যজন দেবশ্রী রায়।
এই রকম বহু অকপট, প্রাণবন্ত, বিস্তারিত আলাপচারিতায় ভরপুর এই সাক্ষাৎকারটি।
বইটি কলেজ স্ট্রীটে ও পাওয়া যাবে তাঁদের নিজস্ব স্টোরে।
কলেজ স্ট্রিট:
নিজস্ব স্টোর:
♦ ভারতী বুক স্টল (৬বি,রমানাথ মজুমদার স্ট্রিট)
শরদিন্দু প্রেমীদের কাছে বইটি বিশেষ প্রিয় হয়ে উঠবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।