বইমেলা ২০২২ ও ‘অবসর’

‘ডিসেম্বরের মাঝামাঝি, উঠেছিল বাজনা বাজি’ যে এবার বইমেলা হচ্ছেই। হওয়ার কথা ছিল আগের বছরের নিয়ম মেনেই, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত। আমিও প্রস্তুত হচ্ছিলাম কলকাতা আসার পরিকল্পনাও হয়ে গেছিল জানুয়ারির ৭ তারিখে। শোনা যাচ্ছিল আবহাওয়া বেশ মনোরম। আচম্বিতেই হানা দিল ‘ওমিক্রন’ – ব্যস! সব কিছু স্থগিত।

তবে কিছুদিনের মধ্যেই জানা গেল ওমিক্রন নাকি যেমন তেড়ে ফুঁড়ে বাড়বে, ঠিক তেমনই সুতীব্র গতিতে তার পতন হবে। সেইসব নিয়ে মেলার দিন স্থির হয়ে গেল ২৮শে ফেব্রুয়ারি থেকে – ১৩ই মার্চ। ব্যস, আমরাও লেগে পড়লাম।

বইমেলা তে আমাদের মিট শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে। শেষ মিট ২০১৯। মাঝে কোভিড এসে আমাদের জীবনের অনেক কিছুই পালটে দিয়েছে। তাই এবার উৎসাহ ছিল বেশ চোখে পড়ার মতই। তবে অচিরেই এল দুঃসংবাদ।

আমাদের ‘অবসর’ পত্রিকার প্রাণপুরুষ হলেন সুজন দাশগুপ্ত। তিনি জানালেন যে এবার আর তাঁর পক্ষে বইমেলার সময় আসা সম্ভব হবে না। এটা আমাদের মানে আমি, অভিষেক, অমিতাভ, শেখরবাবু – সব্বাইয়ের কাছেই এক বিরাট দুঃসংবাদ। বইমেলার মূল আকর্ষণই তো একেনবাবুর (সুজনদার ডিটেকটিভ) বইতে সুজনদার সই ও অমিতাভর মাইসোর পাকের স্বাদগ্রহণ। গতবারের ছবি দেখলেই বোঝা যাবে। নীচে দিলাম – ফেব্রুয়ারি ২০১৯।

তাহলেই বোঝা যাচ্ছে, মেলার আকর্ষণ কেমন প্রথমেই ম্লান হয়ে আসছে। আমার স্ত্রীও বলছিলেন, “সুজনদা, শমীতাদি ছাড়া কেমন যেন ঠিক জমবে না।” আমারও দুর্ভাবনা ছিল – কিন্তু কী আর করা! শেখরবাবুকে ফোন করে জিজ্ঞেস করতেই খুব উৎসাহ দিলেন। সেটাই যেন একেবারে অক্সিজেনের মত কাজ করল। পল্লব চট্টোপাধ্যায় ও জানাল আসছে। তবে আমাদের আরো দু’জন নিত্যশুভার্থী ঈশানী ও শিবাংশুদা থাকছেন না। থাকবেন আমাদের আর এক লেখক সোমেন দে – বহুবছর ধরে যিনি অবসর পত্রিকার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। নব কলেবরে ‘অবসর’ ও তাঁর দাক্ষিণ্য থেকে বঞ্চিত হয়নি।

শনিবার (৬ই মার্চ), আমাদের মিট ছিল। শুক্রবার একবার ধুঁ মেরেছিলাম রাতের দিকে। তখন স্টলের জায়গা দেখে এলাম, অভিষেক এন্ড কোম্পানির সঙ্গেও এক প্রস্থ আড্ডা হল। অনির্বাণ দত্ত এসেছিল, সব্বাই মিলে একটা সেলফি তুলে নেওয়া হল স্টলের সামনে।

পরদিন যখন রওয়ানা হয়েছি বইমেলার উদ্দেশে, যাত্রাপথেই অমিতাভর ফোন-

  • ভাস্করদা, ৩১৪র সামনের জায়গাতে প্রচণ্ড রোদ। একটু সরে গিয়ে দাঁড়ানো যায়? ভালো জায়গা আছে।
  • কিন্তু সবাইকে তো ওখানেই বলা আছে। যদি লোকজন বিভ্রান্ত হয়?
  • তাহলে জমায়েত প্রথমে ওখানেই হোক। তারপরে সরে যাওয়া যাবে।

যাক! মনে একটু শান্তি এল! সুজনদাও না থাকলেও সুজনদার প্রচারক মাইসোর পাক সমেত হাজির। সুতরাং —-

স্টলে গিয়েই দেখি, অভিষেক প্রচণ্ড ব্যস্ত। লোকের প্রচুর ভিড় স্টলে। লাইন দিয়ে লোকে বই কিনছে। বড় আনন্দ হল। যতই আড্ডা মারি, বইমেলার প্রধান উদ্দেশ্য তো বইয়ের প্রচার ও বিক্রি। সেটা ব্যর্থ হলে সব মাটি। যাইহোক, অভিষেককে মোটামুটি স্টল থেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে এসে  ছবি তোলানো গেল স্টলের সামনেই। ইতিমধ্যে এসে গেছেন আমাদের বহুদিনের পরিচিত সুজাতা বেরা, সুদূর হলদিয়া থেকে সকন্যা এসেছেন ‘অবসর’ মেলার অংশ হতে। এসেছেন ‘অবসর’ পত্রিকার নব্য লেখক অভিষেক দত্তও।

এরপরেই এসে গেলেন শেখরবাবু, আমাদের অভিভাবক লেখক শেখর বসু। অমিতাভকেও ডেকে নেওয়া হল। রোদের হাত থেকে বাঁচতে আমরা অমিতাভর কথামতো একটু সরে গেলাম ছায়াঘেরা জায়গাতে। এর পরেই সব পুজোর আগে গণেশ পুজো। অর্থাৎ অমিতাভর হাত থেকে মাইসোর পাক খেয়ে আড্ডার উদ্বোধন।

এর পরে ক্রমে ক্রমে এসে গেলেন পল্লব চট্টোপাধ্যায়, অরুণাচল দত্ত চৌধুরী, সোমেন দে এবং শ্যামলী আচার্য। বেশ ভালো জমজমাট আড্ডা শুরু হয়ে গেল। শ্যামলী অবশ্য ব্যস্ত ছিলেন বলে ওঁকে বেশিক্ষণ আটকাতে পারলাম না। তার মধ্যেই অবশ্য লেখার প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলে নিয়েছি।

ইতিমধ্যে আমাদের আরও এক বন্ধু অনির্বাণ দত্ত এসে গেছেন। শুধু নিজেই আসেননি, সঙ্গে এনেছেন বন্ধু সুলেখক শ্রী তথাগত মুখোপাধ্যায়কে। পল্লব তথাগতর লেখা ‘পিচ্ছিল’ উপন্যাসটি পড়েছেন আমার মত। জানা গেল পল্লব এবং তথাগত একই সংস্থায় বহুদিন কাজ করলেও আজই তাঁদের প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ।

বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা করা গেল। নব্য লেখক অভিষেক তো ভীষণ খুশি আমাদের সবার সঙ্গে আলাপ করে। শেখরবাবু ‘অবসর’ পত্রিকার জন্য অনেক শুভেচ্ছা জানালেন। আমি অমিতাভ কে বললাম যে শেখরবাবু চান তুমি আরও বেশি বিজ্ঞানের লেখা লেখ। আমার কথায় কাজ হচ্ছে না, তবে শেখরবাবুর কথা নিশ্চয়ই অমিতাভ রাখবে। দেখতে দেখতে বেলা গড়িয়ে গেল, সকলেরই অন্যান্য স্টলে যাওয়ার ছিল। এবারের মিলনমেলার এখানেই ইতি।
খুব মিস করেছি যাঁদের তাঁরা নিঃসন্দেহে সুজনদাও, শমীতাদি, ঈশানী। পায়েল চট্টোপাধ্যায় আর ময়না মুখোপাধ্যায় সম্ভবত পরে এসেছিলেন, দেখা হল না। আর প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য! সব ব্যবস্থা করেও শেষমেশ গণ্ডগোল হয়ে গেল। আগামী মেলাতে সব্বাইয়ের সঙ্গে দেখা হবার আশা রাখি।
‘অবসর’ পত্রিকার দুই সহ সম্পাদককে পরের ‘অবসর’ আড্ডার জন্য এখন থেকেই আমন্ত্রণ জানালাম। জানুয়ারি ২০২৩! আশা করা যায়, ততদিনে আমরা এক নতুন আলোকপূর্ণ পৃথিবী দেখতে পাব।

‘দিবস রজনী আমি যেন তার আশায় আশায় থাকি’।

সাধ্যমত চেষ্টা করলাম সব্বাইকে যোগ করার। অনবধানে কেউ বাদ পড়ে গেলে ত্রুটি মার্জনীয়।

Leave a comment