বৈশাখী – কিশোরকুমার সংখ্যা

আশির দশকের মাঝামাঝি তিনি একবার গেয়ে উঠলেন,

“সবার যিনি অশোক কুমার —আমার দাদামণি
তাঁর কাছেতেই হাতেখড়ি —আমার পরশমণি
আমার দিদিমণির গানের গলা —মিষ্টি ছিল ভারি
দিদি আমার গানের গুরু —শিষ্য আমি তারই
এমনি করে রঙে-রসে —ভরে ছিল দিনগুলি
ছোটবেলার কিশোর এখন কিশোরকুমার — হারিয়েছে গাঙ্গুলী।”

সত্যিই তিনি এক বর্ণময় চরিত্র। বহুবর্ণময়। তাঁকে নিয়ে এক বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে বৈশাখী পত্রিকা। সম্পাদকদ্বয় জানিয়েছেন,

আমরা সম্পূর্ণ একমত। আমাদের মনে হয় তাঁর মত আর কেউ কি আছেন যিনি একই সঙ্গে গান লিখেছেন, সেই গানে সুরও দিয়েছেন, অভিনয় করে কন্ঠ মিলিয়েছেন আর পাশে নিজের ছেলেকে নিয়ে এমন এক গান শুনিয়েছেন যা আজও চিরনবীনঃ

“Jaha door nazar daudaye, azad gagan lehraye
Jaha rang birange panchi, asha ka sandesha laye”

ঠিক ঐ গানের মতই তিনি আমাদের জন্য সৃষ্টি করে গেছেন এক অদ্ভুত জগত। সে জগতে ঢুকে আমরা হাসি, কাঁদি, ভালোবাসি! তিনি আমাদের সুখ দুঃখের সঙ্গী। তিনি চিরকিশোর, চিরনবীন, কিশোরকুমার।

যখন তিনি গেয়েছেন,

“কেউ যায়রে বন্ধুর বাড়ি / নাও বাইয়া উজানে
কেউ শাঁখা ভাইঙা সিঁদুর / ধুইয়া ফিরে ভাটির টানে
কারো আশার তরী বন্ধু / পায় নারে কিনারা
ভালোবাসা মরণ হইয়া / কারে করে ইশারা”

আমাদের মন তাঁর সঙ্গেই পাড়ি দিয়েছে ভাটির টানে। আমাদের চোখের সামনে ফুটে উঠেছে ‘শাঁখা ভাইঙা সিঁদুর ধুইয়া’ নারীর বাড়ি ফেরার ঘটনার কথা। আবার ‘সিং নেই তবু নাম তার সিংহ’ গানের মজার অনুভূতিতে তিনি আমাদের দিয়েছেন এক অন্য মূর্ছনা।

পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি ডাকতেন ‘পোলাওবাবু’ বলে। পুলকের গীতিকাব্যে খুশি হয়ে বলতেন, ‘এ যে পোলাওয়ের মত মিষ্টি গান। একবার রেকর্ডিঙের সময় ‘অনেক দিনের হারানো সুখ পেলাম যে আবার’ গাইতে গিয়ে বারবার ভুল করে ‘হারানো সুর’ বলে ফেলছিলেন। পুলকবাবু শুধরে দিলে ঠিক করে নিলেন, কিন্তু তার আগে বললেন – ‘আহা! ‘হারানো সুর’ আর উত্তমকুমার! উত্তমকুমারকে আমার নমস্কার জানাবেন।” কী কাণ্ডই না করতে পারতেন তিনি!

আবার এমন মজার মানুষই ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের অকৃত্রিম বন্ধু। ‘পথের পাঁচালী’র সময় ৫০০০ টাকা তুলে দিয়েছিলেন সত্যজিতের হাতে। দেশে বিদেশের থেকে সিনেমার খবর নিয়ে আসতেন সত্যজিতের জন্য। সত্যজিৎও মুগ্ধ ছিলেন তাঁর গানে।

সম্পাদকদ্বয় কে ধন্যবাদ জানাই আমার একটি লেখাকে এমন এক সংকলনে স্থান দেওয়ার জন্য। সূচীপত্র দেখলেই সংকলনের মান সম্পর্কে আভাস পাওয়া যাবেঃ

অগণিত লেখার মধ্য থেকে কয়েকটি বিশেষ লেখার কথা না বললেই নয়।

রয়েছে – কিশোরকুমারের নিজের লেখা, কিশোরকুমারের সাক্ষাৎকার । এছাড়াও আছে অশোককুমার, রুমা গুহঠাকুরতা, সলিল চৌধুরী, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, অজয় দাস, রাহুল দেববর্মন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, সত্যজিৎ রায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, দেব আনন্দ, দিলীপকুমার, মেহমুদ, রাজেশ খান্না, অমিতাভ বচ্চন, মাধবী মুখোপাধ্যায়, সুপ্রিয়া দেবী, বৈজয়ন্তীমালা, প্রমুখদের গুরুত্বপূর্ণ লেখা।

সঙ্গে সুপ্রকাশ গড়গড়ি, বি. আর. চোপড়া, কালিদাস বটব্যাল, সন্দীপ রায়, সবিতা চৌধুরী, বাপি লাহিড়ী, কল্যাণজি – এঁদের লেখাও রয়েছে ।

বস্তুতঃ এই গ্রন্থটি কিশোরকুমারকে নিয়ে একটি অবশ্য সংগ্রহযোগ্য সংখ্যা। কিশোর অনুরাগীদের নিঃসন্দেহে মন জয় করবে। যাঁরা সংগ্রহ করতে চান, যোগাযোগ করতে পারেন অন্যতম সম্পাদক সঞ্জয় সেনগুপ্তের সঙ্গে।

ফোন – 98308 76787

Leave a comment