‘সুরের আকাশে তুমি যে গো শুকতারা, আমায় করেছ একি চঞ্চল বিহ্বল দিশাহারা’ –
কে তাঁর এই অবস্থা করেছিল জানিনা, তবে গলার মাদকীয়তাতে আমাদের দিশাহারা করতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার!! অনেকেই তাঁর কন্ঠসম্পদে মুগ্ধ কিন্তু শ্রেষ্ট শিরোপা বোধহয় তাঁর অতি প্রিয় সলিল চৌধুরীর, –
‘ভগবান যদি গান গাইতেন, তাঁর গলাটা অনেকটা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মত লাগতো’!!
আর চেহারাটি ও ছিল ভারী মনোমুগ্ধকর!! একবার তখন আমরা খুব ছোট, ডায়মন্ডহারবারের নুরপুরে পিকনিক করতে গিয়েছিলাম। দেখলাম তিনিও এক জায়গাতে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলেন, সঙ্গে সদ্য-পরিনীতা ‘বালিকা বধূ’ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় ও রাণু মুখোপাধ্যায়। বেশ হাঁ করে দেখেছিলাম সেই লম্বা মানুষটিকে, পরনে ধুতি আর সেই টিপিক্যাল হাফ হাতা শার্ট। দেখে খুব নির্বিবাদী, নিরহঙ্কারী মনে হয়েছিল। পরে বেশ কিছু ঘটনা শুনে সেই ধারণা সত্যি বলে মনে হয়েছে। বছর দুয়েক পর পাড়ার জলসায় গান শোনাতে এলেন, সামনে থেকে গান শোনার সৌভাগ্য হল। মুগ্ধতা বাড়তে লাগলো।
কত গানের স্মৃতিই তো আছে, কিন্তু একটি পুজোর গান যেন কিরকম ভাবে বুকে লেগে যায়।
মনে হল হঠাৎ, আচ্ছা, গান কি শুধু শোনার? দেখার নয়?
হেমন্তর সুবাদে আমাদের সেই অভিজ্ঞতাও আছে। আমাদের মফস্বলে মহালয়ার সময়েই বেশ ঠাণ্ডার আমেজ থাকত। সে অবশ্য সত্তরের দশকের কথা। আরো ঠিক করে বলতে গেলে ১৯৭৪ সাল।
আমাদের বাড়িতে সামনে ও পিছনে দুটি বারান্দা ছিল, দুটিই খুব পছন্দের। তবে সামনের বারান্দা থেকে অনেক দূর দেখা যেত। রাস্তার ওপাশেই ছিল পুকুর, তারপরেই একটি বড় স্কুল। তারপরে বেশ অনেকটাই ফাঁকা। এক বিরাট মাঠ।
ঐ স্কুলেই হত আমাদের দুর্গাপুজো। মাইকে মহালয়ারও প্রচার হত, আবার বাজত পুজোর গান।
সেই যে বললাম চুয়াত্তর সন! মহালয়ার দিন। মহালয়া শোনার পর বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেছে। হঠাৎ কিছু শুনে বাইরে বারান্দায় এলাম!
স্কুলে মাইক বাজছে, আমি শুনতে পাচ্ছি – নাঃ দেখতে পাচ্ছি –
“তুমি চলতে চলতে থমকে গেলে কেন কে জানে?
আমার মনটা ছড়ানো ছিল যেখানে!
আমি দেখলাম, শুধু দেখলাম
আর সুখের কান্না কেঁদে গেলাম
সেদিন তোমায় দেখেছিলাম ভোরবেলায়
কথা খুঁজতে খুঁজতে ভুলতে হল কথা আমাকে
আমার কিছুই হলনা বলা তোমাকে
শুধু বুঝলাম, আমি বুঝলাম
এক নতুন বেদনা খুঁজে পেলাম”!!
আমিও এক নতুন অনুভূতি খুঁজে পেলাম। সে কি বেদনা, না ভালোলাগা – জানিনা। শুধু জানি, কেউ এসেছিল। দাঁড়িয়েছিল-
“কৃষ্ণচূড়ার ওই ফুলভরা
গাছটার নিচে
আমি কৃষ্ণচূড়ার সেই স্বপ্নকে
আহা, দুচোখ ভরে দেখে নিলাম”!!
তাই বলছিলাম আর কি! গানও দেখা যায়।
গানটা শুনেই ফেলা যাক –
Excellent, exposed your feelings of heart through your pen, you have potential…..can go far and far, God blessed
With best wishes
Biren da
LikeLiked by 1 person
বরাবরের মত এবারও মুগ্ধ হলাম, ভারি মনোরম সাবলীল লেখনী, মন আপনই কাড়ে।।।
LikeLike
Oshadharon.. 👌👌👌🙏🙏🙏🙏
LikeLiked by 1 person
অনেক ধন্যবাদ রে
LikeLike
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মত বিশাল ব্যক্তিত্যের মানুষকে নিয়ে আপনার ভাবনা, আপনার অভিজ্ঞতা, সর্বপরি আপনার লেখনিকে আমি সম্মান করি। আপনার প্রতিবেদন অবশ্যই বহু মানুষকে তাদের প্রিয় এই মহান শিল্পীকে আরো বেশি করে জানতে সাহায্য করবে। নমস্কার নেবেন, ভালো থাকবেন। 🙏
LikeLike